
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় রচনার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের হাতছানি টাইগারদের সামনে। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ। প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত জয় তুলে নিয়ে এখন ঘরের মাঠে ঐতিহাসিক সিরিজ জয় থেকে মাত্র এক কদম দূরে লিটন কুমার দাসের দল।
প্রথম টি-টোয়েন্টিতে যেভাবে পাকিস্তানকে হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ, তাতে করে মনোবলে বেশ এগিয়ে টাইগাররা। পুরো ম্যাচে একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করে সহজেই ম্যাচটি জিতে নেয় স্বাগতিকরা। ব্যাটে-বলে অসাধারণ সমন্বয়, ফিল্ডিংয়ে শৃঙ্খলা এবং টিম স্পিরিট—সব মিলিয়ে বাংলাদেশ দল যেন এখন আত্মবিশ্বাসে টগবগ করছে।
বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক লিটন কুমার দাস ইতোমধ্যে দলের হয়ে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে ও শ্রীলঙ্কায় প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। এবার সেই সাফল্যের তালিকায় যুক্ত হতে পারে আরেকটি নাম—পাকিস্তান।
এই সিরিজটি তার অধিনায়কত্বে প্রথম পূর্ণ হোম সিরিজ। দেশের মাটিতে হোম ক্রাউডের সামনে নিজের নেতৃত্বের যোগ্যতা প্রমাণ করার দারুণ একটি সুযোগ এটি লিটনের জন্য। তার অধীনেই পাকিস্তানকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়ার সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশ।
প্রথম ম্যাচের হারের পর পাকিস্তান দল এখন মানসিকভাবে ব্যাকফুটে। সিরিজে টিকে থাকতে হলে আজকের ম্যাচে তাদের জয়ের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। সফরে এসে মাত্র একদিন অনুশীলনের সুযোগ পেয়েছে তারা। দ্বিতীয় ম্যাচের আগের দিনও পুরো দল ছিল হোটেলবন্দি।
বিশেষ করে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপের ধস ও বোলারদের ছন্দহীনতা চোখে পড়ার মতো ছিল। সালমান আঘা, আজম খান কিংবা ইফতেখার আহমেদ কেউই নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সিরিজ বাঁচাতে পাকিস্তান একাদশে কিছু পরিবর্তন আনতে পারে। সবচেয়ে আলোচনায় আছেন সুফিয়ান মুকিম—একজন বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার, যিনি ইতোমধ্যে পাকিস্তানের হয়ে ১০টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। তার বৈচিত্র্য এবং টার্নিং অ্যাবিলিটি বাংলাদেশের ব্যাটারদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
বাংলাদেশ দলে পরিবর্তনের সম্ভাবনা একেবারেই কম। প্রথম ম্যাচে সফল হওয়া কম্বিনেশন নিয়েই দ্বিতীয় ম্যাচে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে দল। তিন পেসার—তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, ও শরিফুল ইসলাম এবং দুই স্পিনার—নাসুম আহমেদ ও মেহেদী হাসান মিরাজ নিয়ে লাল-সবুজ শিবির আত্মবিশ্বাসী।
বিশেষ করে স্পিন বিভাগে নাসুম ও মিরাজ প্রথম ম্যাচে যেভাবে কিপটেমি করেছেন, তাতে পাকিস্তানের মিডল অর্ডার চাপে পড়ে গিয়েছিল। লিটনের অধীনে পুরো দল একটি ইউনিট হয়ে কাজ করছে, যা সিরিজ জয়ের অন্যতম চাবিকাঠি হতে পারে।
প্রথম ম্যাচে টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়ায় বাড়তি সুবিধা পেয়েছে বাংলাদেশ। দীর্ঘ ৯ ম্যাচ পর টসে জেতার স্বাদ পেয়েছেন লিটন। দ্বিতীয় ম্যাচেও তিনি চাইবেন টস জিতে প্রথমে বোলিং করতে।
শেরেবাংলার পিচের চরিত্র ও রাতে শিশির পড়ার সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করাই লাভজনক বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে বৃষ্টি এলে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে রান তাড়া করা দলের সুবিধা থাকে।
অবশ্য আজকের ম্যাচের সবচেয়ে বড় অনিশ্চয়তা বৃষ্টি। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, সন্ধ্যা ৬টার সময় মিরপুরে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আয়োজকরা বলছেন, মাঠ প্রস্তুত রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
দর্শকদের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। অনেকেই আশায় বুক বেঁধেছেন যে, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে নতুন একটি দিন লেখা হবে আজ সন্ধ্যায়। যদিও বৃষ্টির হস্তক্ষেপ না ঘটলেই ভালো।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এটি শুধু আরেকটি ম্যাচ নয়, এটি একটি ঐতিহাসিক সুযোগ। পাকিস্তানের মতো একটি ক্রিকেট পরাশক্তির বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের স্বাদ কখনোই পায়নি টাইগাররা। এবার সেই মুহূর্তটি খুব কাছে।
এখন লিটনদের হাতে রয়েছে সেই সোনালী সুযোগ—দেশের মাটিতে কোটি সমর্থকের সামনে ইতিহাস গড়ার। মিরপুরের স্টেডিয়ামে, সন্ধ্যা ৬টা, আজকের ম্যাচ ঘিরে তাই পুরো জাতি তাকিয়ে আছে একটাই দিকে—সিরিজ জয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ