
ছবি: সংগৃহীত
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর লাগাতার হামলায় আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে মানবিক বিপর্যয়। গত ২৪ ঘণ্টায় এই অবরুদ্ধ ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বিমান ও স্থল অভিযানে নিহত হয়েছেন আরও ১৩৪ জন ফিলিস্তিনি। একই সময়ে সহায়তা নিতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন ৯৯ জন, আহত হয়েছেন ৬৫০ জনের বেশি। ফলে গাজায় চলমান যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৯ হাজার ২৯ জনে।
সোমবার (২১ জুলাই) তুরস্কভিত্তিক বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সি এবং ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এই মর্মান্তিক তথ্য উঠে এসেছে।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৪ জনের মৃতদেহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও মেডিকেল সেন্টারে পৌঁছেছে, যাদের অধিকাংশই সাধারণ নাগরিক, যার মধ্যে রয়েছেন বহু নারী ও শিশু। আহত হয়েছেন আরও ১,১৫৫ জন। ফলে এই যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত আহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার ১৩৫ জন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, “এই অভিযান এখন আর কেবল একটি সামরিক আক্রমণ নয়, বরং এটি সুপরিকল্পিত গণহত্যা। বহু লাশ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে, যেগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না, কারণ সেসব এলাকায় পৌঁছাতে পারছেন না উদ্ধারকারীরা।”
ইসরায়েলি বাহিনী সামরিক স্থাপনা নয়, বরং মানবিক সহায়তার লাইনে দাঁড়ানো অসহায় মানুষদের ওপর টার্গেট করে হামলা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সহায়তা নিতে যাওয়া মানুষের ওপর হামলায় ৯৯ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৬৫০ জনের বেশি।
এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, “মানবিক সহায়তা নিতে গিয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে, এমন দৃশ্য ২১ শতকের মানব সভ্যতার জন্য চরম লজ্জাজনক।” ২৭ মে থেকে এ পর্যন্ত এই ধরনের ঘটনায় ১,০২১ জন নিহত এবং ৬,৫১১ জন আহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধের ভয়াবহতা বাড়ছেই। ইসরায়েলের দাবি ছিল, হামাসের ওপর প্রতিশোধ নিতেই তারা অভিযান শুরু করেছে। তবে বাস্তবে এর লক্ষ্য হয়ে উঠেছে পুরো গাজাবাসী। হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী ক্যাম্প এমনকি জাতিসংঘের রিলিফ ক্যাম্পও ছাড় পায়নি ইসরায়েলি গোলাবর্ষণ থেকে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধের নামে এটি এখন আর কেবল রাজনৈতিক বা কৌশলগত লড়াই নয়, বরং একপেশে নির্মূল অভিযান। যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা থাকলেও গত মার্চের ১৮ তারিখ থেকে আবারও নতুন দফায় বোমাবর্ষণ শুরু করে ইসরায়েল, যেখানে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৮,১৯৬ জন এবং আহত হয়েছেন ৩০,০৯৪ জন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, যেসব লাশ এখনো উদ্ধার হয়নি, সেগুলোর হিসাব যুক্ত করলে প্রকৃত মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে। গাজা শহরের বহু এলাকা পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বিদ্যুৎ, পানি, চিকিৎসা সেবা সব কিছুই ভেঙে পড়েছে।
জাতিসংঘের মতে, বর্তমানে গাজায় বসবাসকারী অর্ধেকের বেশি মানুষ চরম খাদ্য সংকটে ভুগছেন, এবং ৮০ শতাংশ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। গাজার ভবিষ্যৎ এখন চরম অনিশ্চয়তায়।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং কিছু আন্তর্জাতিক সংগঠন বহুবার যুদ্ধবিরতি ও মানবিক করিডোর খুলে দেওয়ার আহ্বান জানালেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পশ্চিমা বিশ্বের নীরবতা এবং জাতিসংঘের ব্যর্থতায় আরও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ গাজাবাসী।
চলমান এই সহিংসতা রোধে এখনই দৃঢ় আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। ফিলিস্তিনের জনগণকে ধ্বংসের মুখ থেকে বাঁচাতে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সহিংসতা থেকে রক্ষা করতে জরুরি মানবিক পদক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে।
গাজা আরেকটি শোচনীয় পরিণতির মুখে দাঁড়িয়ে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ