
ছবি: সংগৃহীত
ভিয়েতনামের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হা লং বে-তে ঘটে গেল এক হৃদয়বিদারক ট্রাজেডি। পর্যটকবাহী একটি নৌকা খারাপ আবহাওয়ার কবলে পড়ে ডুবে যাওয়ায় অন্তত ৩৪ জন নিহত হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন, যাদের সন্ধানে রাতভর তৎপরতা চালাচ্ছেন উদ্ধারকর্মীরা। দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত শোকাহত এই মর্মান্তিক ঘটনায়।
উল্লেখ্য, ডুবে যাওয়া নৌকাটির নাম ছিল ‘ওয়ান্ডার সিজ’। এটি রাজধানী হ্যানয় থেকে আসা পর্যটকদের নিয়ে হা লং বে-র মনোরম প্রকৃতিতে ভ্রমণ করছিল। নৌকাটিতে মোট ৫৩ জন যাত্রী ছিলেন, যাদের বেশিরভাগই ভিয়েতনামি পরিবারভুক্ত।
শনিবার (১৯ জুলাই) দুপুর ২টার দিকে হা লং বে-র আকাশ হঠাৎ অন্ধকার হয়ে আসে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাত শুরু হয় একদম হঠাৎ করেই। এমন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেই পর্যটকবাহী নৌকাটি আকস্মিক ঝড়ের কবলে পড়ে। সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের তোড়ে নৌকাটি উল্টে যায় এবং মুহূর্তেই ডুবে যেতে থাকে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ভিএনএক্সপ্রেস জানায়, দুর্ঘটনার সময় অধিকাংশ যাত্রী নৌকার নিচতলায় অবস্থান করছিলেন, যার ফলে অনেকেই দ্রুত বের হতে পারেননি। এক কর্মকর্তা জানান, উদ্ধারকৃত মৃতদেহগুলোর মধ্যে অন্তত ৮ জন শিশু রয়েছে।
এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মাঝেও ঘটে যায় অলৌকিক ঘটনা। ১৪ বছর বয়সি এক কিশোর চার ঘণ্টা ধরে উল্টে থাকা নৌকার ভেতরে একটি এয়ার পকেটে আটকে ছিল। পরবর্তীতে তাকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। একইভাবে, ১০ বছর বয়সি আরেক শিশুকেও জীবিত উদ্ধার করে বাই চাই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, বর্তমানে সে স্থিতিশীল অবস্থায় চিকিৎসাধীন।
ভারি বৃষ্টিপাত ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে উদ্ধার অভিযান ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। তবে নৌবাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও উদ্ধারকর্মীদের কয়েকটি ইউনিট যৌথভাবে নিখোঁজদের সন্ধানে তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে। রাতভর চলবে অভিযান।
ভিয়েতনামি নৌবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমরা জীবিতদের উদ্ধারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে, তবে আমরা হাল ছাড়ছি না।”
ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী ফাম মিন চিন গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এই দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি। এক সরকারি বিবৃতিতে তিনি জানান, “এই দুঃখজনক ঘটনার প্রকৃত কারণ নির্ধারণে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে এবং যদি কোনো গাফিলতি বা নিয়ম লঙ্ঘন ঘটে থাকে, তাহলে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
হা লং বে, কোয়াং নিন প্রদেশে অবস্থিত এই চমৎকার প্রাকৃতিক স্থানটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকাভুক্ত। শত শত ছোট-বড় দ্বীপপুঞ্জে ঘেরা অঞ্চলটি প্রতিবছর লাখো পর্যটককে আকৃষ্ট করে। ২০১৯ সালে এখানে প্রায় ৪০ লাখ পর্যটক বেড়াতে এসেছিলেন। অথচ, এই জনপ্রিয় গন্তব্যেই ঘটে গেল সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে ভয়াবহ নৌকাডুবি দুর্ঘটনাগুলোর একটি।
উল্লেখ্য, হা লং বে-তে অতীতেও মাঝেমধ্যে নৌদুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে এবারের ঘটনাটি এত বেশি প্রাণহানির কারণে আলাদা গুরুত্ব পেয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি এবং আবহাওয়া সতর্কতায় গাফিলতি নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
এই ঘটনার পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে পর্যটক নৌযানগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও আবহাওয়াজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রস্তুতি। সরকার ইতোমধ্যে এই খাতের সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তা নীতিমালা আরও কঠোর করার ইঙ্গিত দিয়েছে।
এই ট্র্যাজেডি শুধু হতাহতদের পরিবার নয়, পুরো ভিয়েতনাম এবং বিশ্ববাসীকে কাঁদিয়েছে। অনিশ্চয়তার ভেতরে এখনও নিখোঁজদের সন্ধান চলছে, সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে— ভবিষ্যতে যেন এমন আর না ঘটে, তার জন্য কি যথেষ্ট প্রস্তুত ভিয়েতনাম?
বাংলাবার্তা/এমএইচ