
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকার উত্তরা দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা কেবল রাজধানী নয়, শোকের ছায়া ফেলেছে গোটা বাংলাদেশজুড়ে। নিহতের সংখ্যা ২২ জন ছাড়িয়ে গেছে, আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক, যাদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু ও শিক্ষার্থী। এই করুণ দুর্ঘটনা দেশের সকল স্তরের মানুষকে মর্মাহত করেছে। শোকস্তব্ধ সাধারণ মানুষ, রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে চিকিৎসক কিংবা সাংবাদিক—সবাই এই বেদনাবিধুর ঘটনার গভীরতা অনুভব করছেন। দেশের সংস্কৃতি অঙ্গন, বিশেষত অভিনয় জগতের তারকারাও এই ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ সংবাদমাধ্যমের সাথেও কথা বলেছেন। প্রতিটি কথার মাঝে ফুটে উঠেছে অসহায়ত্ব, বেদনা আর অদ্ভুত এক শূন্যতা—যা শিশুদের মুখ, চোখ, পোড়া গায়ে প্রতিফলিত হয়ে উঠছে।
শাহনাজ খুশি: 'সব সন্তানকে নিজের সন্তান মনে হচ্ছে'
অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি জানালেন, দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। চোখে জল ধরে রাখতে পারছেন না। তাঁর ভাষায়, “প্রত্যেকটা সন্তানকে আমার নিজের সন্তান মনে হচ্ছে। আজ যারা মা হয়ে বুক খালি করলেন, তাদের কি কেউ সান্ত্বনা দিতে পারবে? নিজের সন্তান হারানোর এই ব্যথা কোনো ভাষায় বোঝানো যায় না। আর যারা শুধু ‘ভিউ’ পাওয়ার জন্য এই মর্মান্তিক দৃশ্য ভিডিও করে ছড়াচ্ছেন, তাদের বিবেক কোথায়? প্লিজ, এসব বন্ধ করুন। মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে এই ফুটেজ দেখে।”
রোজিনা: ‘বাচ্চাদের ছবি টিভিতে দেখতেও পারছি না’
চিত্রনায়িকা রোজিনা জানালেন, তিনি এক ধরনের আতঙ্ক আর আতশির মধ্যে আছেন। “ছোট ছোট বাচ্চারা পড়তে গিয়েছিল, ওদের এই দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি দেখতে পারছি না। টেলিভিশনে কিছুক্ষণ দেখার পরই মানসিকভাবে অস্থির হয়ে পড়ছি। যারা সন্তান হারিয়েছেন, তাদের যন্ত্রণার কথা ভাবতেই পারছি না। এসব বাচ্চা তো ফুলের মতো। কতগুলো ফুল ঝরে গেল আজ। কেবল প্রার্থনা করতে পারি—আল্লাহ যেন সবাইকে এই শোক সইবার শক্তি দেন।”
জয়া আহসান: ‘এই শূন্যতা কোনো ভাষায় বোঝানো যাবে না’
বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান নিজেই জানান, তিনি টেলিভিশনের স্ক্রিনে তাকাতে পারছেন না। তাঁর মতে, “শিশুদের এভাবে হারিয়ে ফেলা—এটা কোনো দেশ, কোনো জাতি কখনো মেনে নিতে পারে না। তারা তো স্কুলে গিয়েছিল, লেখাপড়া করতে। তারা তো যুদ্ধ করতে যায়নি! তাদের বাবা-মায়েরা এখন যে শূন্যতা অনুভব করছেন, তা ভাষায় বোঝানো যাবে না। আমার হৃদয় ভারাক্রান্ত। যারা হাসপাতালে আছে, তারা যেন দ্রুত সুস্থ হয়, এটাই কামনা।”
ফজলুর রহমান বাবু: ‘এই যন্ত্রণা প্রতিটি ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে’
নন্দিত অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবুর কণ্ঠে শোকের ভার যেন বেড়ে চলেছে। তাঁর প্রশ্ন, “এত জনবহুল এলাকায় প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান ওড়ানো কতটা নিরাপদ? নিশ্চয়ই এখন সময় এসেছে এই বিষয়গুলো গভীরভাবে চিন্তা করার। আজ যারা নিহত হয়েছে, তারা আমাদেরই সন্তান। আমি মন থেকে বলছি, আজ শুধু উত্তরার মাইলস্টোনের পরিবার নয়—বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে আজ এই কষ্ট ছড়িয়ে গেছে।”
দীপা খন্দকার: ‘এটা তো কোনোভাবেই কাম্য নয়’
অভিনেত্রী দীপা খন্দকার বললেন, “ঘটনাটি ভীষণ দুঃখজনক ও বেদনাবিধুর। আমরা কখন কার জীবনে কী ঘটে যায়, জানি না। আজকে মাইলস্টোনে ঘটেছে, কাল হয়তো আমার ছেলের স্কুলেও হতে পারে। স্কুলের পাশ দিয়েই বিমান ওড়ে—এই নিরাপত্তার অভাব তো কারও কাম্য নয়। হাসপাতালগুলোতে যারা এখন চিকিৎসাধীন, তাদের যেন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সেবা দেওয়া হয়।”
সজল: ‘মনটাই আজ ভেঙে গেছে’
অভিনেতা সজলের কণ্ঠে শোকের গভীর ছায়া, “মনটা আজ একেবারে ভেঙে গেছে। ছোট ছোট বাচ্চাদের পোড়া গায়ে ছবি দেখে নিজের ভেতরেই চাপ পড়ে যাচ্ছে। অসহায় লাগছে। চোখে জল আটকে রাখতে পারছি না। বারবার আল্লাহকে ডাকছি—আর যেন এমন না হয়। যেসব মা আজ বুক খালি করলেন, তাদের আমরা কী বলব? কেবল প্রার্থনা করি, তারা যেন শক্তি পান। দুর্ঘটনার খবর শোনার পর থেকেই নিজের মধ্যেই এক ধরণের ট্রমা অনুভব করছি।”
সামগ্রিক প্রতিক্রিয়া: তারকাদের আহ্বান—যথাযথ তদন্ত ও সেবা নিশ্চিত হোক
তারকারা কেবল শোক জানাননি, বরং অনেকেই বলেছেন এই দুর্ঘটনার পেছনে কী কী অনিয়ম থাকতে পারে, সে বিষয়েও দৃষ্টি দিতে হবে। বিশেষ করে প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান জনবহুল এলাকায় ওড়ানো কতটা যৌক্তিক—সেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। একইসঙ্গে তাঁরা আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
মাইলস্টোনের এই করুণ ঘটনার অভিঘাত পেরিয়ে ভবিষ্যতের শিক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখন দরকার সমবেদনার চেয়ে বেশি কিছু—দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত, মানবিক সহায়তা, এবং বেদনার উপরে উঠে দাঁড়ানোর সাহস। দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের তারকারা শুধু সমবেদনা জানালেন না, বরং তাঁরা এক ধরনের সামাজিক বিবেকের কথাও উচ্চারণ করলেন—যা জাতীয় শোকের সময় আরও গভীর হয়ে ওঠে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ