
ছবি: সংগৃহীত
প্রায় নয় বছর পর পাকিস্তানকে মূল দলের অংশগ্রহণে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে পরাজিত করল বাংলাদেশ। দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ঘরের মাঠে রোববার (২০ জুলাই) টাইগাররা ৭ উইকেটে হারিয়েছে শক্তিশালী পাকিস্তান দলকে। বল হাতে দুর্দান্ত বোলিং করেন মোস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদ, আর ব্যাট হাতে ম্যাচ জয়ের নায়ক হয়ে ওঠেন ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে পাকিস্তান। তবে বাংলাদেশি পেসারদের তোপে মাত্র ১১০ রানে গুটিয়ে যায় তারা। এরপর পারভেজ হোসেন ইমনের অপরাজিত ফিফটির ওপর ভর করে ২৭ বল হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় লিটন দাসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল।
এই জয়ে অনেক রেকর্ডই লেখা হলো নতুন করে। সর্বশেষ ২০১৬ সালের এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। তারপর মূল দলে মুখোমুখি হওয়া সবগুলো ম্যাচেই হার। মাঝখানে ২০২৩ সালের এশিয়ান গেমসে জিতলেও তা দ্বিতীয় সারির দলের মধ্যে লড়াই ছিল। সেই হিসাবে এটি ছিল দীর্ঘ প্রতীক্ষিত জয়।
এই ম্যাচসহ পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলেছে মোট ২৩ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ, যার মধ্যে এটি ছিল মাত্র চতুর্থ জয়। আগের তিন জয়ই এসেছিল মিরপুরেই। অর্থাৎ, পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের যত জয়, সবই শেরে বাংলার মাটিতে।
বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের সামনে একরকম অসহায় আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তান। ১৯.৩ ওভারে অলআউট হয় তারা, যা এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের প্রথম অলআউট হওয়া। আগে কখনোই টাইগাররা তাদের ৭ উইকেটের বেশি ফেলতে পারেনি।
পাকিস্তানের বিপক্ষে এটাই ছিল সর্বনিম্ন দলীয় স্কোর। এর আগে ২০২১ সালে মিরপুরেই তারা ২০ ওভার খেলে করেছিল ৫ উইকেটে ১২৭ রান।
মোস্তাফিজুর রহমান এই ম্যাচে গড়েছেন একাধিক রেকর্ড। তিনি ৪ ওভারে মাত্র ৬ রান খরচ করে ২ উইকেট নেন। এটি বাংলাদেশের পক্ষে পূর্ণ কোটা বোলিং করে সবচেয়ে কম রান খরচের রেকর্ড। আগের রেকর্ড ছিল ৭ রান দিয়ে ৩ উইকেট (নেপালের বিপক্ষে, ২০২4 বিশ্বকাপে)। এই কীর্তিতে তার সঙ্গে রয়েছেন তানজিম হাসান সাকিব ও রিশাদ হোসেন, যারা একইভাবে ৭ রান দিয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন।
এছাড়া, মোস্তাফিজ আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশের বোলারদের মধ্যে একমাত্র যিনি চারটি ম্যাচে পূর্ণ কোটা বোলিং করে ১০ রানের কম খরচে শেষ করেছেন। ৩টি করে ম্যাচে এই কীর্তি রয়েছে সাকিব আল হাসান, ভারতের ভুবনেশ্বর কুমার ও পাকিস্তানের ইমাদ ওয়াসিমের।
পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ওপেনার হিসেবে একাধিক ফিফটি করার কৃতিত্ব গড়েছেন পারভেজ হোসেন ইমন। এদিন তিনি ৩৯ বলে তিনটি চার ও পাঁচটি ছক্কায় করেন অপরাজিত ৫৬ রান। এর আগে, ২০২৪ সালের জুনে লাহোরে তিনি ৩৪ বলে ৬৬ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেছিলেন। ফলে পাকিস্তানের বিপক্ষে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে নিজেকে প্রমাণ করলেন এই তরুণ ওপেনার।
ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ দল ও সমর্থকদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এই জয়ে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা সফরে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের পর এটি দলের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে নিঃসন্দেহে।
এখন বাংলাদেশের লক্ষ্য সিরিজ জয় নিশ্চিত করা এবং বিশ্বকাপের আগে নিজেদের প্রস্তুতিকে আরও শাণিত করা। টানা পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারলে, এই দল ভবিষ্যতে আরও বড় মঞ্চে সাফল্য আনতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ