
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের সামনে আবারও হাজির হয়েছে এক উত্তেজনাপূর্ণ সিরিজ। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছে পাকিস্তান জাতীয় ক্রিকেট দল। সবশেষ সফরের মতো এবারও ঢাকায় বসবে রোমাঞ্চকর লড়াইয়ের আসর। রোববার (২০ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে শুরু হবে প্রথম ম্যাচ। সিরিজের বাকি দুটি ম্যাচও অনুষ্ঠিত হবে একই ভেন্যুতে।
সিরিজ শুরুর আগের দিন শনিবার সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন সফরকারী পাকিস্তান দলের অধিনায়ক সালমান আলি আগা। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরেন এবং টাইগারদের প্রশংসায় ভাসান। সালমানের মতে, বাংলাদেশ যেকোনো মাঠে একটি ভালো দল, তবে ঘরের মাঠে তারা আরও ভয়ংকর প্রতিপক্ষ।
সালমান বলেন, “এটা আমাদের জন্য অ্যাওয়ে কন্ডিশন। যে কোনো মাঠ, যে কোনো ভেন্যু এবং যে কোনো দেশেই বাংলাদেশ একটি ভালো দল। আর ঘরের মাঠে খেললে তারা আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। আমরা জানি, এখানে খেলা মানে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ। আমরা সেই চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত এবং বেশ রোমাঞ্চিতও।”
সালমান আরও বলেন, “আমরা অতীতের পরিসংখ্যান বা রেকর্ডে যাচ্ছি না। ২০১৬ সালের পর বাংলাদেশ আমাদের হারাতে পারেনি, কিন্তু আমরা এখন নতুন লড়াইয়ে মুখোমুখি হচ্ছি। প্রতিটি ম্যাচ আমাদের কাছে নতুন এক যুদ্ধ। আমরা ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে চাই এবং তিনটি ম্যাচেই জয়ের লক্ষ্য নিয়ে নামব, যদিও তা সহজ হবে না।”
পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও জনপ্রিয় বিশ্লেষক রমিজ রাজা বলেন, “বাংলাদেশের ঘরের মাঠের পরিবেশ অনেক চ্যালেঞ্জিং, স্পিন সহায়ক উইকেট এবং আবহাওয়া পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা হতে পারে। বাংলাদেশ যদি তাদের স্পিন শক্তি কাজে লাগাতে পারে, তাহলে পাকিস্তানকে চাপে ফেলতে সক্ষম হবে।”
প্রখ্যাত পাকিস্তানি সাবেক অলরাউন্ডার শহিদ আফ্রিদিও টাইগারদের হালকাভাবে নিতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ এখন অনেক বেশি পরিণত দল। তাদের তরুণ খেলোয়াড়রা সাহসী, বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে। পাকিস্তান যদি প্রথম ম্যাচে পিছিয়ে পড়ে, তাহলে সিরিজ ঘুরে যেতে পারে।”
পাকিস্তানের দলটি অনেকটাই নতুনদের নিয়ে গঠিত হলেও অধিনায়ক সালমান আলি আগা দলে থাকা তরুণদের নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেন, “টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন আসছে, বিশেষ করে প্রতি ৬ মাসেই। আমাদের দলে দুটি নতুন পেসার যুক্ত হয়েছে, যারা খুবই প্রতিভাবান। তাদের নিয়ে আমি খুবই আশাবাদী এবং এক্সাইটেড।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অভিজ্ঞতা ও তরুণদের মিশেলে গঠিত এই পাকিস্তান দলটি চমকে দিতে পারে বাংলাদেশকে, আবার বিপরীত ঘটনাও অসম্ভব নয়।
বাংলাদেশ দলের জন্য এটি শুধুই আরেকটি সিরিজ নয়—বিশ্বকাপের পর দল পুনর্গঠনের সময় এটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হয়ে উঠতে পারে। টাইগারদের মূল লক্ষ্য থাকবে হোম কন্ডিশনের পূর্ণ ফায়দা তুলে নিয়ে প্রতিটি ম্যাচে লড়াকু পারফরম্যান্স উপহার দেওয়া।
ক্রিকেট বিশ্লেষক আতহার আলী খান মনে করেন, “পাকিস্তানের বিপক্ষে হোম সিরিজে টাইগারদের মানসিকতা সবচেয়ে বড় বিষয়। ওদের ব্যাটিং লাইনআপ শক্তিশালী, কিন্তু কন্ডিশন যদি কাজে লাগানো যায়, বাংলাদেশ অবশ্যই এগিয়ে থাকবে।”
সালমান আলি আগার নেতৃত্বে স্কোয়াডে আছেন: আবরার আহমেদ, আহমেদ দানিয়াল, ফাহিম আশরাফ, ফখর জামান, হাসান নওয়াজ, হুসেইন তালাত, খুশদিল শাহ, মোহাম্মদ আব্বাস আফ্রিদি, মোহাম্মদ হারিস (উইকেটরক্ষক), মোহাম্মদ নওয়াজ, সাহিবজাদা ফারহান, সাইম আইয়ুব, সালমান মির্জা এবং সুফিয়ান মুকিম।
বাংলাদেশ-পাকিস্তান মানেই বাড়তি উত্তাপ। মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেমন থাকবে, তেমনি রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটও সিরিজটিকে দেবে বাড়তি মাত্রা। তবে সব ছাপিয়ে এটাই ক্রিকেট—এখানে জিততে হলে কথা নয়, খেলতে হবে মাঠে।
তাই, রোববার থেকে শুরু হতে যাওয়া এই সিরিজে প্রত্যেক ওভারই হতে যাচ্ছে রুদ্ধশ্বাস—যেখানে শ্রদ্ধা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার মিশেলে গড়ে উঠবে নতুন ইতিহাস।
সিরিজ সূচি ও ম্যাচের সময়সূচি
প্রথম টি-টোয়েন্টি: ২০ জুলাই, রোববার – সন্ধ্যা ৬টা
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি: ২২ জুলাই, মঙ্গলবার – সন্ধ্যা ৬টা
তৃতীয় টি-টোয়েন্টি: ২৪ জুলাই, বৃহস্পতিবার – সন্ধ্যা ৬টা
সকল ম্যাচই অনুষ্ঠিত হবে ঢাকার মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ