
ছবি: সংগৃহীত
সাড়ে তিন বছর পর ঘরের মাঠে আবার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। সিরিজ শুরু হচ্ছে আজ মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। দুই দলের মধ্যে অতীতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি ম্যাচের পরিসংখ্যান বলছে, পাকিস্তানের কাছে একচেটিয়া আধিপত্যে রয়েছে মেন ইন গ্রিনরা। তবে এবার ভিন্ন আবহে, নতুন আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে নামছে টাইগাররা। শ্রীলঙ্কার মাটিতে সদ্য সমাপ্ত সিরিজ জয়ের পর দলটি যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। অতীত পরিসংখ্যান ভুলে গিয়ে এবার নতুন করে ইতিহাস লেখার স্বপ্ন দেখছে লিটন দাসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান এখন পর্যন্ত ২২ বার একে অপরের মুখোমুখি হয়েছে। তার মধ্যে মাত্র ৩ বারই জয় এসেছে লাল-সবুজের শিবিরে, আর বাকি ১৯ বারই জয় উদযাপন করেছে পাকিস্তান। বাংলাদেশের তিনটি জয় এসেছে যথাক্রমে ২০১৫ সালের মিরপুরে, ২০১৬ সালের এশিয়া কাপে মিরপুরেই এবং সর্বশেষ ২০২৩ সালে চীনের হাংঝৌতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি ছিল ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে। ওই ম্যাচে মোহাম্মদ আশরাফুলের নেতৃত্বাধীন দল হেরে যায় ৩০ রানে। এরপরের প্রতিটি সিরিজে পাকিস্তান নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে। বিশেষ করে ঘরের মাঠ মিরপুরে পাকিস্তান বরাবরই শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করে এসেছে।
বাংলাদেশে পাকিস্তান এখন পর্যন্ত ৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে, যার মধ্যে সবগুলোতেই জিতেছে তারা। সর্বশেষ ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত তিন ম্যাচের সিরিজে স্বাগতিক বাংলাদেশকে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাবর আজমের দল।
পরিসংখ্যানে পিছিয়ে থাকলেও বাংলাদেশ দলের সাম্প্রতিক ফর্ম আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে। চলতি বছরের মার্চ-এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘরের মাটিতে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে লিটনরা। এছাড়া গত বছর ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৪-১ ব্যবধানে জয় পেয়েছে টাইগাররা।
এবার প্রায় ১৪ মাস পর আবারো দেশের মাটিতে টি-টোয়েন্টি খেলবে বাংলাদেশ দল। মিরপুরে দীর্ঘ বিরতির পর প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবে টাইগাররা, যা ঘরের মাঠের সুবিধা দিলেও উইকেটের আচরণ নিয়ে রয়েছে কিছুটা অনিশ্চয়তা।
মিরপুরের উইকেট বরাবরই ব্যাটসম্যানদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। পাশাপাশি এবার আবহাওয়ার অনিশ্চয়তা এবং দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক খেলা না হওয়ায় উইকেটের আচরণ নিয়েও দুশ্চিন্তা রয়েছে। স্টেডিয়ামে এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৬৩ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের মধ্যে ৩২টি ম্যাচে জয় পেয়েছে পরে ব্যাট করা দল, অর্থাৎ টস জয়ী দল সাধারণত ফিল্ডিংকেই বেছে নেয়।
ম্যাচের ফলাফলে টস বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। বৃষ্টি হলে ওভার কমে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে, যা রান তাড়া করা দলকে বাড়তি সুবিধা দিতে পারে।
এই সিরিজে বাংলাদেশের কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমানের সামনে রয়েছে একটি বড় মাইলফলক ছোঁয়ার সুযোগ। মিরপুরে এখন পর্যন্ত তার সংগ্রহ ৪৩ টি উইকেট। আর মাত্র ২ উইকেট পেলেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে হোম অব ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হয়ে যাবেন তিনি। বর্তমানে এই তালিকার শীর্ষে রয়েছেন সাকিব আল হাসান (৪৫ উইকেট)। দীর্ঘদিন পর দেশের মাটিতে ফিরে নিজস্ব কন্ডিশনে বল করতে মুখিয়ে আছেন মোস্তাফিজ।
অন্যদিকে, পাকিস্তান দলও খুব একটা ফর্মে নেই। সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড সফরে ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে তারা হেরেছে ৪-১ ব্যবধানে। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকাতেও তারা ২-০ ব্যবধানে সিরিজ হারিয়েছে। এই ব্যর্থতা তাদের আত্মবিশ্বাসে বড় ধাক্কা দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে পাকিস্তান অধিনায়ক সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ‘বিশ্বের যেকোনো মাঠে বাংলাদেশ এখন ভালো দল। তাদের হারাতে হলে আমাদের সেরা ক্রিকেটটাই খেলতে হবে।’
আগামী মাসেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এশিয়া কাপ। তাই এই সিরিজ দু'দলের কাছেই বেশ গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি। বিশেষ করে বাংলাদেশ দলের জন্য এটি আত্মবিশ্বাস তৈরি ও দল গোছানোর চূড়ান্ত মঞ্চ। তরুণ খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স, অধিনায়ক লিটনের নেতৃত্বে রণকৌশল এবং মিরপুরের পিচে মানিয়ে নেওয়ার বিষয়গুলো ভালোভাবে পরীক্ষিত হবে এই সিরিজেই।
পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের অতীত পরিসংখ্যান যতই হতাশাজনক হোক না কেন, ক্রিকেট মাঠে প্রতিটি দিনই নতুন সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয়। লিটন দাসের দল যদি মিরপুরের ঘরোয়া সুবিধা, সাম্প্রতিক ফর্ম এবং বৃষ্টির হস্তক্ষেপকে কাজে লাগিয়ে শুরুটা ভালো করতে পারে, তাহলে হয়তো আবারও অতীতকে পেছনে ফেলতে পারবে টাইগাররা। লাখো ভক্ত-সমর্থকের চোখ এখন মিরপুরে, যেখানে ইতিহাস বদলের লড়াইয়ে নামছে বাংলাদেশ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ