
ছবি: সংগৃহীত
দেশজুড়ে সমালোচনার মুখে শেষ পর্যন্ত স্থগিত করা হলো আজ (মঙ্গলবার) অনুষ্ঠিতব্য এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে পোস্টের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত জানানোর কথা নিশ্চিত করা হয়। তারা জানান, শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার এই স্থগিতাদেশ দিয়েছেন।
ঘোষণাটি আসে এমন এক সময়ে, যখন এর কয়েক ঘণ্টা আগেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরীক্ষা চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় ছিল। তবে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রবল জনরোষ ও শিক্ষার্থী, অভিভাবক, বিশিষ্টজনদের ক্রমবর্ধমান চাপই মূলত এই সিদ্ধান্ত বদলের কারণ হয়ে ওঠে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সোমবার বিকেলে রাজধানী ঢাকায় একটি বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে পাইলটসহ বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন এবং মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় জাতি যখন স্তব্ধ ও শোকাচ্ছন্ন, তখন পরীক্ষা চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা।
নেটিজেন, শিক্ষার্থী ও বিশিষ্টজনেরা প্রশ্ন তোলেন—এমন একটি দিনে কীভাবে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে পারে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য?
বিভিন্ন ফেসবুক পোস্টে শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে ভেসে আসে অসন্তোষ, শোক আর ক্ষোভ। অনেকেই বলেন, এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষার কথা ভাবাও অমানবিক।
অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের তার ফেসবুক পোস্টে প্রশ্ন তোলেন, “এই দেশের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা কোথায়? তিনি কি করছেন? শিক্ষা উপদেষ্টা নাকি ইতোমধ্যেই মন্তব্য করেছেন, আজকের ঘটনার সাথে এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর সম্পর্ক কোথায়? কিভাবে পারেন?”
তার পোস্টে মন্তব্যকারীদের কেউ কেউ বিদ্রুপ করে লেখেন, ‘আইন উপদেষ্টা নাকি বিদেশ থেকে ডাক্তার আনবেন। এখন মনে হচ্ছে উপদেষ্টাদেরই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদ তার নিজস্ব ফেসবুক পেজে লেখেন, “আগামীকালের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করো ইন্টারিম! এমন ট্রাজেডির পর কোনো শিক্ষার্থীর পক্ষে পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়।”
একজন শিক্ষার্থী, সোহা আক্তার সাদিয়া, মর্মান্তিক একটি ঘটনা তুলে ধরে লেখেন, “এইচএসসি পরীক্ষার্থী রুবাইয়ের মা মাইলস্টোনে মারা গেছেন। উপদেষ্টা সাহেব, আপনি একটু বলেন, সে কি মায়ের লাশ দাফন করবে, নাকি আগামীকাল পরীক্ষা দেবে?”
আজকের স্থগিত হওয়া পরীক্ষাগুলোর মধ্যে রয়েছে—
রসায়ন (তত্ত্বীয়) দ্বিতীয় পত্র (বিজ্ঞান শাখা)
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি দ্বিতীয় পত্র (মানবিক শাখা)
ইতিহাস দ্বিতীয় পত্র বা গৃহ ব্যবস্থাপনা ও পারিবারিক জীবন দ্বিতীয় পত্র
উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন দ্বিতীয় পত্র (ব্যবসায় শিক্ষা শাখা)
বলা হয়েছে, স্থগিত হওয়া পরীক্ষাগুলোর পুনঃতালিকাসম্পর্কিত সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে।
বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে শিক্ষার্থীরা জানায়, শুধু দুর্ঘটনা নয়, দেশের সামাজিক বাস্তবতা, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক প্রস্তুতির অনুপস্থিতির বিষয়টি মাথায় রেখেই পরীক্ষা পেছানো উচিত ছিল।
বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, শিক্ষা প্রশাসনের উচিত হবে ভবিষ্যতে এমন সিদ্ধান্ত আরও দ্রুত ও মানবিকভাবে নেওয়া।
আজকের সিদ্ধান্ত হয়তো হাজারো পরীক্ষার্থীর জন্য তাৎক্ষণিক স্বস্তি বয়ে এনেছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়—একটি মর্মান্তিক জাতীয় ট্রাজেডির পরও কেন পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল? কেন শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি প্রথমে বিবেচনায় আসেনি? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে অভিভাবক, শিক্ষার্থী এবং সুশীল সমাজ।
তবে শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করায় কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে ক্ষুব্ধ জনমনে। এখন অপেক্ষা, নতুন তারিখ ঘোষণার।
বাংলাবার্তা/এমএইচ