
ছবি: সংগৃহীত
দুই মহাদেশের দুই শ্রেষ্ঠ চ্যাম্পিয়নের মুখোমুখি লড়াই—‘ফিনালিসিমা’ ঘিরে বরাবরই ফুটবলপ্রেমীদের আগ্রহ থাকে তুঙ্গে। আর এবার তো উত্তেজনার পারদ আরও অনেক উঁচুতে। কারণ, ২০২৬ সালের মার্চে যে ম্যাচটির সম্ভাব্য দিনক্ষণ ঠিক হয়েছে, সেটিতে মুখোমুখি হবেন বর্তমান সময়ের সেরা তারকা লিওনেল মেসি ও ফুটবলবিশ্বের নতুন বিস্ময়, স্পেনের লামিন ইয়ামাল। দুজন দুই প্রজন্মের প্রতীক। সেই কারণে ম্যাচটি কেবল দুটি দলের মধ্যে লড়াই নয়, বরং দুটি সময়ের প্রতিনিধির মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই বলেও বিবেচিত হচ্ছে।
আগামী ১৭ থেকে ২৫ মার্চের মধ্যে ফিনালিসিমা অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) সভাপতি ক্লদিও ‘চিকি’ তাপিয়া এবং স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি রাফায়েল লোজান। এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে চলতি বছরের মে মাসে অনুষ্ঠিত ফিফা কংগ্রেসেও। সেই আলোচনা থেকে ফুটবলপ্রেমীরা আশা করছেন, এবার আর বিলম্ব হবে না এই বহুল প্রতীক্ষিত ম্যাচে।
ম্যাচের ভেন্যু এখনো চূড়ান্ত হয়নি। শুরুর দিকে সম্ভাব্য আয়োজক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নাম উঠে এলেও, পরবর্তীতে কাতার ও সৌদি আরবও ম্যাচটি আয়োজনের আগ্রহ দেখিয়েছে। ফলে ইউরোপ বা আমেরিকার বাইরে, এশিয়াতেই ম্যাচটি আয়োজন হওয়ার সম্ভাবনা জোরালোভাবে দেখা দিয়েছে। ফুটবলের নতুন বাজার হিসেবে এশিয়াকে ঘিরে ফিফার আগ্রহ, আর মধ্যপ্রাচ্যের আধুনিক স্টেডিয়াম ও বিনিয়োগ—এই দুইয়ের সমন্বয়ে আয়োজক দেশ নির্বাচন সহজ হচ্ছে না।
তবে দিনক্ষণ ও ভেন্যু নির্ধারণের পাশাপাশি একটি শঙ্কাও রয়েছে সামনে। স্পেন যদি সরাসরি বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত না করতে পারে এবং তাদের মার্চ মাসে প্লে-অফ খেলতে হয়, তাহলে নির্ধারিত সময়ের ফিনালিসিমা বাতিল হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে ম্যাচটি হয়তো পিছিয়ে যেতে পারে বা বিকল্প সময়সূচি নির্ধারণ করতে হবে।
উল্লেখ্য, ফিনালিসিমার সর্বশেষ আসর অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০২২ সালে। লন্ডনের ওয়েম্বলিতে সেই ম্যাচে ইউরোজয়ী ইতালিকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল কোপা জয়ী আর্জেন্টিনা। দারুণ পারফরম্যান্সে সেদিন জ্বলে উঠেছিলেন মেসি, আর সেই বছরই কাতার বিশ্বকাপের শিরোপাও ঘরে তোলে লা আলবিসেলেস্তেরা।
আসন্ন ফিনালিসিমায় তাই একদিকে থাকবেন লিওনেল মেসি—যিনি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ পর্বে পৌঁছেও দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিশ্বসেরা পর্যায়ে। অন্যদিকে থাকবেন মাত্র ১৭ বছর বয়সী লামিন ইয়ামাল—যিনি ইউরোর মঞ্চে স্পেনের জার্সিতে অভিষেকেই সবার নজর কেড়েছেন। অনেকেই বলছেন, এই ম্যাচ হতে যাচ্ছে দুই প্রজন্মের দুই বিস্ময় প্রতিভার প্রথম মুখোমুখি লড়াই।
তবে কেবল তারকাদের লড়াই নয়, দলীয় হিসেবেও ম্যাচটি উত্তেজনায় ভরপুর হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমান কোপা চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা ও সদ্য ইউরো শিরোপা জয়ী স্পেন দুই দলই ব্যালান্সড এবং অভিজ্ঞতার সঙ্গে তরুণদের মিশেলে গড়া দল। ফলে ম্যাচটি হবে ট্যাকটিক্যাল লড়াইয়ের এক অনন্য উপস্থাপনাও।
ফুটবলবিশ্ব এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ঘোষণা আসার। কোথায় হবে ম্যাচটি? ঠিক কবে মাঠে গড়াবে এই দুই পরাশক্তির লড়াই? আর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—মেসি-ইয়ামাল লড়াইয়ে হাসবে কার মুখ? সময়ই দেবে সব প্রশ্নের উত্তর। তবে এইটুকু নিশ্চিত—২০২৬ সালের মার্চ ফুটবলপ্রেমীদের জন্য নিয়ে আসছে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
বাংলাবার্তা/এমএইচ