
ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে জনগণ বিএনপির পক্ষে রায় দেবে—এ ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। তবে সেই রায় নিশ্চিত করতে হলে এখনই দলীয় ঐক্য সুসংহত করতে হবে, ভাঙন বা বিভক্তির কোনো সুযোগ রাখা যাবে না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সরকার গঠনের সুযোগ পেলে বিএনপিকে ধ্বংসস্তূপ থেকে দেশকে পুনর্গঠনের দায়িত্ব নিতে হবে, আর সেই পথচলায় সবচেয়ে বড় পুঁজি হবে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস।
রোববার বিকেলে রাজশাহী মহানগর বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানসংলগ্ন মাঠে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে হাজারো নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশ কৃষিভিত্তিক দেশ, আর রাজশাহী অঞ্চল কৃষি উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ফারাক্কা বাঁধের কারণে পদ্মা নদী শুকিয়ে যাচ্ছে, যা এ অঞ্চলের জন্য বড় হুমকি। “পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালত ও জাতিসংঘে যাব,”—ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, দেশের খাল-বিল সংস্কার করে পানির স্থায়ী সংরক্ষণ ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে প্রতিবেশী দেশ পানি আটকে রাখলেও কৃষকরা সেচের জন্য পর্যাপ্ত পানি পায়।
জুলাই মাসের গণ-আন্দোলনের কথা স্মরণ করে তারেক রহমান বলেন, দেশের সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নেমে এসে স্বৈরাচারী সরকারকে হটিয়েছে। “এই আন্দোলনে হাজারো মানুষ প্রাণ দিয়েছে, ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, কেউ চিরতরে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে,”—তিনি আবেগঘন কণ্ঠে বলেন। বিএনপি ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক শক্তি দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে রাজপথে থেকে মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করেছে, যার ফলে আজ স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, আন্দোলনের সময় বিরোধী মতের মানুষদের বিরুদ্ধে গুম, খুন, মিথ্যা মামলা, গণগ্রেফতার চালানো হয়েছিল। “আজ যারা এখানে উপস্থিত আছেন, তাদের অধিকাংশই সেই মিথ্যা মামলার শিকার,”—বলেন তিনি। শুধু বিএনপিই নয়, অন্যান্য বিরোধী দল, পেশাজীবী, সাংবাদিক—যে কেউ স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কথা বললেই অত্যাচারের মুখে পড়েছিল।
তারেক রহমান অভিযোগ করেন, স্বৈরাচারী শাসনে নির্বাচন ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়া হয়েছিল—স্থানীয় সরকার থেকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত কোনো ক্ষেত্রেই অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট হয়নি। বিচারব্যবস্থা ধ্বংস করে দলীয়করণ করা হয়েছিল, ব্যাংক খাত লুটপাটের শিকার হয়েছিল, আর মেগা উন্নয়নের নামে মেগা দুর্নীতি হয়েছিল। “দেশের অর্থ-সম্পদ বিদেশে পাচার করা হয়েছে,”—তিনি উল্লেখ করেন।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপির লক্ষ্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে আনা এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, জনগণের সরাসরি ভোট প্রয়োগের সুযোগ ফিরিয়ে দিতে হবে, যাতে জনগণ নিজের হাতে সরকার নির্ধারণ করতে পারে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, রমজানের আগেই জাতীয় নির্বাচন হবে এবং বিএনপি জনগণের সমর্থন নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাবে। তবে তিনি সতর্ক করেন, শুধু ক্ষমতায় আসাই যথেষ্ট নয়—ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও জনগণের আস্থা বজায় রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছোট ও মাঝারি কলকারখানা গড়ে তোলা হবে বলে জানান তারেক রহমান। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং দেশ শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। পাশাপাশি বিচারব্যবস্থার জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা দূর করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি, যাতে মানুষ দ্রুত ন্যায়বিচার পায় এবং বছরের পর বছর আদালতের বারান্দায় ঘুরতে না হয়।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা। বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক উপ-সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মামুনুর রশিদ মামুন।
সম্মেলন মাঠে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ও উচ্ছ্বাসে রাজশাহী শহর যেন পরিণত হয়েছিল এক রাজনৈতিক মিলনমেলায়। বক্তৃতার প্রতিটি মুহূর্তে ‘গণতন্ত্র চাই’, ‘ভোটাধিকার চাই’ ধ্বনি মিলেছে স্লোগানে। সবশেষে তারেক রহমানের আহ্বান স্পষ্ট—“ঐক্যবদ্ধ থাকুন, কারণ সামনে যে লড়াই আসছে, তা কেবল নির্বাচনের নয়, তা দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।”
বাংলাবার্তা/এমএইচ