
ছবি: সংগৃহীত
জিম্বাবুয়ে সফরে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা জিতল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে হারিয়ে ফাইনাল ম্যাচে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করল টাইগার যুবারা। পুরো সিরিজ জুড়েই ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে আলো ছড়ানো এই দলটি শেষ লড়াইয়েও দেখিয়েছে দৃঢ়তা, পরিকল্পিত ব্যাটিং-বোলিং এবং দলীয় চেতনার এক অনন্য উদাহরণ।
গত রোববার জিম্বাবুয়ের ঐতিহ্যবাহী হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে অনুষ্ঠিত হয় ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল। সিরিজের অপর প্রতিপক্ষ ছিল স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে, যারা লিগ পর্ব থেকেই ছিটকে যায়। গুরুত্বপূর্ণ এই ফাইনালে টস জিতে বাংলাদেশকে আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় দক্ষিণ আফ্রিকা অনূর্ধ্ব-১৯ দল।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ছিল ধীরস্থির কিন্তু ইতিবাচক। উদ্বোধনী জুটিতে জাওয়াদ আবরার ও রিফাত বেগ মিলে সংগ্রহ করেন ৪১ রান। কিন্তু এরপর হঠাৎ করেই ব্যাটিং লাইনআপে ধস নামে। মাত্র ২৪ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে বাংলাদেশ। তখন স্কোরবোর্ডে রান ছিল ৬৫/৩।
এ সময় ইনিংসকে পুনর্গঠনে এগিয়ে আসেন দুই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটার রিজান হোসেন ও কালাম সিদ্দিকি। চতুর্থ উইকেটে এই দুজন গড়ে তোলেন ১১৭ রানের এক দুর্দান্ত জুটি, যা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। কালাম খেলেন ৭৬ বলে ৬৫ রানের দারুণ ইনিংস, যেখানে ছিল ৬টি চমৎকার বাউন্ডারি।
কালাম আউট হওয়ার পরও থামেননি রিজান। উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান আব্দুল্লাহর সঙ্গে মিলে পঞ্চম উইকেটে দলীয় সংগ্রহে যোগ করেন ৬৩ রান। দলীয় ২৪৫ রানে রিজান আউট হয়ে যান মাত্র ৫ রানের জন্য ব্যক্তিগত সেঞ্চুরি হাতছাড়া করে। তার ৯৬ বলে ৯৫ রানের ইনিংস সাজানো ছিল ১০টি দৃষ্টিনন্দন চারে। শেষ দিকে আব্দুল্লাহ ২৯ বলে অপরাজিত ৩৮ রানের দ্রুতগতির ইনিংস খেলে দলের স্কোর দাঁড় করান ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ২৬৯ রানে— যা ফাইনালের জন্য যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য।
২৭০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনআপ চাপে পড়ে। বাংলাদেশের বোলাররা শুরুর ধাক্কা দিয়ে প্রতিপক্ষকে ম্যাচে ফিরতে দেননি। আল ফাহাদের পেস আক্রমণ এবং রিজানের অনবদ্য স্পিন বোলিংয়ের সামনে অসহায় হয়ে পড়ে আফ্রিকান ব্যাটাররা।
আফ্রিকার হয়ে সর্বোচ্চ ৪০ রান আসে আদনানের ব্যাট থেকে, সনি করেন ৩৬ রান। তবে উইকেটে দাঁড়িয়ে বড় ইনিংস খেলার সুযোগ পাননি কেউই। ৪৮.৪ ওভারে ২৩৬ রানে অলআউট হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা, ফলে ৩৩ রানের স্বস্তিদায়ক জয় পায় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল।
বোলিংয়ে নায়ক রিজান হোসেন— ৮.৪ ওভারে মাত্র ৩৪ রান খরচে তুলে নেন ৫ উইকেট। আল ফাহাদও ছিলেন কার্যকর, ৯ ওভারে ৫০ রান দিয়ে শিকার করেন ৩ উইকেট। ব্যাট হাতে ৯৫ রানের ইনিংস ও বল হাতে ৫ উইকেট— অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যাচ সেরা হন রিজান।
এই জয়ের মধ্য দিয়ে ত্রিদেশীয় সিরিজে অপরাজিত থেকে চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। শুধু ফাইনাল নয়, পুরো সিরিজ জুড়ে তাদের পারফরম্যান্স ছিল শৃঙ্খলাপূর্ণ ও প্রভাবশালী। জিম্বাবুয়ে সফরে এই সাফল্য ভবিষ্যতের জন্যও আস্থা জোগাবে যুব টাইগারদের, যারা সামনে আরও বড় মঞ্চে নিজেদের মেলে ধরতে প্রস্তুত।
বাংলাবার্তা/এমএইচ