
ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় গত রবিবার (১০ আগস্ট) ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বোমাবর্ষণে আল-জাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্কের পাঁচ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন আল-জাজিরার প্রধান প্রতিবেদক আনাস আল-শরীফসহ মোহাম্মদ ক্রিকেহ, ইব্রাহিম জাহের, মোহাম্মদ নওফাল ও মোমেন আলিওয়া। হামলাটি ঘটেছে গাজার আল শিফা হাসপাতালে সাংবাদিকদের জন্য আলাদা করা এক তাঁবুর ওপর, যেখানে তারা কাজ করছিলেন।
আল-জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজা শহরের আল শিফা হাসপাতালের প্রধান ফটকের বাইরে অবস্থিত ওই তাঁবু লক্ষ্য করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হামলা চালায়। এই হামলায় মোট সাতজন নিহত হন, যার মধ্যে পাঁচজন আল-জাজিরার সাংবাদিক ছিলেন। আল-শরীফ দীর্ঘদিন ধরে উত্তর গাজা থেকে নিয়মিত ফিলিস্তিনি অঞ্চলের পরিস্থিতি এবং সংঘাতের খবর পরিবেশন করছিলেন।
নিহত হওয়ার ঠিক আগে আনাস আল-শরীফ এক্সে (সাবেক টুইটার) নিজের পোস্টে উল্লেখ করেন, গাজা শহরের পূর্ব ও দক্ষিণ অংশে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ব্যাপক বোমাবর্ষণ শুরু করেছে। তার শেষ ভিডিওতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের শব্দ স্পষ্ট শোনা যায়, যেখানে আকাশ কমলা আলোয় আলোকিত হয়।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আনাস আল-শরীফকে হামাসের একটি শাখার নেতৃত্বের অভিযোগে দায়ী করেছে এবং দাবি করেছে, তাদের কাছে তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ‘সুনির্দিষ্ট প্রমাণ’ রয়েছে। তবে মানবাধিকার সংস্থা ইউরো-মেডিটেরেনিয়ান হিউম্যান রাইটস মনিটরের বিশ্লেষক মুহাম্মদ শেহাদা এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, আল-শরীফের সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কোনও প্রমাণ তাদের কাছে নেই। তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তার দৈনন্দিন কাজ ছিল।’
আল-জাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্ক এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলে, গাজায় তাদের সাংবাদিকদের, বিশেষত আনাস আল-শরীফকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী যে ‘উসকানিমূলক প্রচারণা’ চালাচ্ছে, তা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য ও নির্মম। তারা দাবি করেছে, সংবাদিকদের ওপর হামলা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার লঙ্ঘন।
গাজা উপত্যকায় চলমান সংঘাতের মধ্যে তথ্য সংগ্রহ ও প্রতিবেদন দেয়ার সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা দুঃখজনক এবং তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও আল-জাজিরার সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে।
নিহত সাংবাদিকরা ফিলিস্তিনি সাধারণ মানুষের জীবনের বাস্তবতা, যুদ্ধ ও সংঘাতের ভয়াবহতা বিশ্বের সামনে তুলে ধরার জন্য নিজেদের জীবন বাজি রেখে কাজ করছিলেন। তাদের মৃত্যু সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সত্যের সন্ধানে এক বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সূত্র: আল-জাজিরা, ইউরো-মেডিটেরেনিয়ান হিউম্যান রাইটস মনিটর
বাংলাবার্তা/এমএইচ