
ছবি: সংগৃহীত
গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরায়েলি সামরিক অভিযানের অংশ হিসেবে শনিবারের হামলায় নতুন করে অন্তত ৩৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় ৯ আগস্টের এই হামলাগুলো মূলত ত্রাণের জন্য অপেক্ষমাণ বেসামরিক মানুষের ওপর কেন্দ্রিত ছিল, যা মানবাধিকারকর্মী ও আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি এএফপিকে নিশ্চিত করেছে যে নিহতদের মধ্যে ৩০ জনই ছিলেন বেসামরিক, যাদের অধিকাংশ ক্ষুধা ও ওষুধের অভাবে ত্রাণ নিতে এসেছিলেন।
গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানান, উত্তর গাজার একটি সীমান্ত ক্রসিংয়ের কাছে ত্রাণ বিতরণস্থলে শত শত মানুষ ভোর থেকেই জড়ো হয়েছিলেন। হঠাৎই ইসরায়েলি বাহিনী সেখানে গুলি চালায়। এ ঘটনায় অন্তত ১২ জন নিহত হন এবং প্রায় ২০০ জন গুরুতর আহত হন। বহু আহতকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য সরিয়ে নেওয়া হলেও, সীমিত চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধের ঘাটতির কারণে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সকালের পর, মধ্য গাজার একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের বাইরে মানুষের দীর্ঘ সারির ওপর ইসরায়েলি সেনারা আবারও হামলা চালায়। সেখানে ছয়জন নিহত এবং আরও প্রায় ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন মাহমুদ বাসাল। তার দাবি, হতাহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য।
একই দিনে মধ্য গাজায় আরও একটি বিমান হামলা চালানো হয়, যার ফলে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করতে পারেনি সিভিল ডিফেন্স।
দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরের কাছে ড্রোন হামলায় অন্তত তিনজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হামলাটি ছিল খুবই লক্ষ্যভিত্তিক এবং একটি নির্দিষ্ট বাসস্থানের ওপর পরিচালিত।
গাজায় গণমাধ্যমের প্রবেশে কঠোর বিধিনিষেধ এবং বহু এলাকায় ইসরায়েলি সেনাদের অবরোধের কারণে সিভিল ডিফেন্স ও ইসরায়েলি বাহিনীর দেওয়া তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপি। যুদ্ধক্ষেত্রের ভেতরের সঠিক পরিস্থিতি জানতে মানবিক সংস্থাগুলোও হিমশিম খাচ্ছে।
গাজায় প্রায় প্রতিদিন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে জড়ো হন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন চারটি কেন্দ্র পরিচালনা করছে। কিন্তু গত মে মাসের শেষ দিকে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় নিয়মিতভাবেই খবর আসছে—ত্রাণ সংগ্রহে অপেক্ষমাণ মানুষের ওপর ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালাচ্ছে।
যুদ্ধ শুরুর প্রায় দুই বছর ধরে ইসরায়েল গাজায় খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির প্রবেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এর ফলে হাসপাতালের জেনারেটর চালানোর মতো পর্যাপ্ত জ্বালানি নেই, যা রোগীদের জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে, গাজার বহু এলাকায় দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে।
এদিকে শুক্রবার ভোরে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজা সিটি দখলে নিতে বড় ধরনের সামরিক অভিযানের পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে শুধু আন্তর্জাতিক মহলেই নয়, ইসরায়েলি সামরিক নেতৃত্বের ভেতরেও অসন্তোষের খবর ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অনড় অবস্থান নিয়েছেন।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের শেষ দিকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘ বলেছে, এই সংখ্যা নির্ভরযোগ্য এবং এর অধিকাংশই বেসামরিক। আহতের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি, এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামোর কারণে গাজা এখন কার্যত বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ