
ছবি: সংগৃহীত
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজা শহর দখলের পরিকল্পনা অনুমোদন দেওয়ার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। তারা এ পদক্ষেপকে গাজার বিরুদ্ধে নতুন এক “যুদ্ধাপরাধ” হিসেবে আখ্যা দিয়ে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়েছে—এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ইসরাইলকে “বড় মাশুল” দিতে হবে, এবং পরিণতি হবে ভয়াবহ।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে। হামাসের জারি করা এক কঠোর ভাষার বিবৃতিতে বলা হয়, “গাজা শহর দখল ও বাসিন্দাদের জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা অনুমোদন মানে দখলদার বাহিনীর নতুন যুদ্ধাপরাধের সূচনা। আমরা অপরাধী দখলদারদের সতর্ক করছি—এই অপরাধমূলক দুঃসাহসের ফল ভোগ করতে হবে, আর এই যাত্রা তাদের জন্য মোটেও সহজ হবে না।”
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, নতুন পরিকল্পনার আওতায় সেনারা গাজা শহর ও এর কৌশলগত এলাকাগুলো সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেবে। একই সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে বেসামরিক জনগণের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে এই ঘোষণা আসার পর দেশ-বিদেশে ব্যাপক নিন্দা ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, এই পরিকল্পনা কেবল সংঘাতকে তীব্রতর করবে এবং দীর্ঘস্থায়ী শান্তির সম্ভাবনাকে আরও দুর্বল করবে।
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা বিষয়টিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। চীন, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান একযোগে বিবৃতি দিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করছেন, গাজায় নতুন সামরিক দখল ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির মতো পদক্ষেপ মানবিক সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলবে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের শামিল হবে।
এদিকে বড় ধরনের নীতি পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়ে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ ম্যারৎস জানিয়েছেন, তার দেশ আর ইসরাইলকে কোনো ধরনের সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করবে না। তিনি বলেন, “নতুন এই পরিকল্পনা বৈধ কোনো লক্ষ্য অর্জনে কীভাবে সহায়তা করবে, তা বোঝা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে।” চ্যান্সেলর আরও স্পষ্ট করে দেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে গাজা উপত্যকায় ব্যবহার হতে পারে এমন কোনো সামরিক সরঞ্জামের রপ্তানির অনুমতি জার্মান সরকার পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দেবে না।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদক্ষেপ ইসরাইলের কূটনৈতিক অবস্থানকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংকটের মধ্যে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে থাকলেও নেতানিয়াহুর সরকার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপের মুখে সামরিক পদক্ষেপের দিকে আরও ঝুঁকছে। অন্যদিকে, হামাসের হুঁশিয়ারি ইঙ্গিত দিচ্ছে, যদি গাজা শহর দখলের চেষ্টা করা হয়, তাহলে সংঘাত নতুন ও আরও রক্তক্ষয়ী পর্যায়ে প্রবেশ করতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শান্তি ও আলোচনার আহ্বান জানালেও, মাঠের বাস্তবতা বলছে—গাজায় আসন্ন দিনগুলোতে উত্তেজনা আরও তীব্র হতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ