
ছবি: সংগৃহীত
আগামীর বাংলাদেশে মসজিদ কমিটি সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, দেশের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ করে মসজিদকে কোনো দলীয় প্রভাব বা রাজনৈতিক স্বার্থের বাইরে রেখে পরিচালনার ব্যবস্থা করা হবে, যাতে মুসল্লিরা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ও আধ্যাত্মিক পরিবেশে ইবাদত-বন্দেগি করতে পারেন।
শনিবার (৯ আগস্ট) সকালে রাজধানীর বি এম এ মিলনায়তনে শানে সাহাবা জাতীয় খতিব ফাউন্ডেশনের আয়োজিত “জাতীয় কনফারেন্সে” প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ প্রতিশ্রুতি দেন। অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন জেলার শতাধিক ইমাম, খতিব ও মসজিদ কমিটির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ড. খালিদ হোসেন জানান, মসজিদ পরিচালনায় দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ রয়েছে যে, কিছু কমিটি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে কিংবা ব্যক্তিগত স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেয়, যা মুসল্লিদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে এবং ধর্মীয় পরিবেশ নষ্ট করে। এই অবস্থা পরিবর্তনের জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ‘মসজিদ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা’ প্রণয়ন করেছে, যা শিগগিরই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “মসজিদ হলো আল্লাহর ঘর, এখানে রাজনীতি বা দলীয় স্বার্থের কোনো স্থান নেই। যারা মসজিদের কমিটিতে যুক্ত হবেন, তারা কেবল মসজিদ ও মুসল্লিদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখবেন, অন্য কোনো স্বার্থ দেখবেন না।”
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সংস্কার প্রসঙ্গে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, সরকার ইতোমধ্যে এই কাজের জন্য ১৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। তবে এই সংস্কারের ক্ষেত্রে মূল অবকাঠামো অক্ষত রাখা হবে, যাতে ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্য নষ্ট না হয়। বরং সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও মেরামতের মাধ্যমে মুসল্লিদের জন্য আরও আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে।
তিনি আরও জানান, বায়তুল মোকাররম মসজিদের সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের আওতায় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংযোজন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা উন্নতকরণ, নারী ও পুরুষ মুসল্লিদের জন্য পৃথক অজুখানা সম্প্রসারণ এবং প্রতিবন্ধী মুসল্লিদের জন্য বিশেষ প্রবেশপথ তৈরি করা হবে।
ড. খালিদ হোসেন জানান, দেশব্যাপী ওয়াকফ এস্টেটগুলোর (ধর্মীয় সম্পত্তি) সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য ডিজিটাল ডাটাবেস তৈরি করা হচ্ছে। এতে করে জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে দখল, অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধ সম্ভব হবে। পাশাপাশি, জমির ভাড়া ও আয়ের হিসাব স্বচ্ছভাবে সংরক্ষণ ও অনলাইনে দেখা যাবে।
তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “নতুন বাংলাদেশে ইমাম-খতিবদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার কোনো সুযোগ নেই। তাদেরকে যথাযথ মর্যাদা ও সম্মান দিয়ে রাষ্ট্রের অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করা হবে।”
অনুষ্ঠানে শানে সাহাবা জাতীয় খতিব ফাউন্ডেশনের নেতৃবৃন্দ ধর্ম উপদেষ্টার কাছে তাদের ১১ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে— ইমাম-খতিবদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, চিকিৎসা সুবিধা, পেনশন ব্যবস্থা চালু, সরকারি বাসস্থান বরাদ্দ, প্রশিক্ষণ কর্মশালা বৃদ্ধি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
ড. খালিদ হোসেন দাবিগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে ইতিবাচক উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে দেশের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আরও সুশৃঙ্খল, স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে পরিচালিত হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ