ছবি: সংগৃহীত
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বিলুপ্ত করা হবে। এই বিভাগ তৈরি করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে। এর উদ্দেশ্য ছিল এমডি নিয়োগ ও পর্ষদে পছন্দের লোক বসিয়ে লুটপাট করা। বিএনপি আগের বার ক্ষমতায় এসে এটি তুলে দিয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা এটি আবার ফিরিয়ে এনেছিলেন। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আবার এটি বিলুপ্ত করবে। আর্থিক খাতে সংস্কার করা ও শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংককে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। শুধু স্বায়ত্তশাসন যথেষ্ট নয়, পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। এ ছাড়া বিনিয়োগ বাড়াতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সংস্কার করা হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এ কথা বলেছেন। সোমবার (২৭ অক্টবর) দুপুরে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ইকোনমিক রিফর্ম সামিটে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এই অনুষ্ঠানের আয়োজক বেসররকারি প্রতিষ্ঠান ভয়েস ফর রিফর্ম, ব্রেইন, ইনোভিশন কনসাল্টিং, ফিনটেক সোসাইটি ও নাগরিক কোয়ালিশন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দুই ভাগে বিভক্ত করে কী লাভ হয়েছে—এমন প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তাঁর মতে, এতে কোনো বাস্তব সুফল মিলবে না, কারণ উভয় অংশই আমলাতন্ত্রের অধীনে রয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে আমলাতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ না করলেও তাদের দায়িত্ব সীমিত করা হবে এবং প্রশাসনে জবাবদিহি বাড়ানো হবে। সরকার পরিচালনায় ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটানো হবে, যাতে নীতিনির্ধারণের দায়িত্ব আমলাদের নয়, নীতিনির্ধারকদের হাতে থাকে।
অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচনায় জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম বলেন, ‘আমরা বর্তমানে তীব্র জ্বালানিসংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। গত ১৫ বছরে নিজস্ব জ্বালানি উৎস কাজে লাগাতে বিনিয়োগ হয়নি, বরং বিনিয়োগ হয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র স্থাপনে। গত ১৫ বছরে প্রায় ৩০ বিলিয়ন বা ৩ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে, কেননা, এখানেই সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির সুযোগ ছিল।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেছেন, অতীত সরকারের প্রবৃদ্ধিনির্ভর উন্নয়ন মডেল দারিদ্র্য ও বেকারত্ব বাড়িয়েছে। তাঁর মতে, তথাকথিত ‘অর্থনৈতিক অলৌকিকতা’র আড়ালে লুকিয়ে ছিল কঠিন বাস্তবতা, যা এখন প্রকাশ্যে এসেছে। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে এবং দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিমধ্যে ধারণা করা হচ্ছে, আরও ৩০ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যেতে পারে, আর দেশে ১৩ লাখ তরুণ-তরুণী বেকার। স্নাতক পর্যায়ের প্রতি তিনজনের একজন কর্মহীন। অধ্যাপক তিতুমীরের মতে, বাংলাদেশ এখন এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে—স্থবিরতা মেনে নেওয়া অথবা নতুন অর্থনৈতিক মডেলের মাধ্যমে টেকসই সমৃদ্ধির পথে অগ্রসর হওয়া—এই দুটি পথের একটিই এখন বেছে নিতে হবে।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ বলেন, বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাবে পিছিয়ে আছে। দেশে জাতীয় বিনিয়োগনীতি নেই। ফলে বিদেশি ও স্থানীয় বিনিয়োগের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য ও পরিকল্পনা নেই। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে একটি পদ্ধতিগত বিনিয়োগ উন্নয়ন কৌশল থাকা উচিত—জাতীয় বাণিজ্য, রপ্তানি ও আমদানি নীতির সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে এটি।
মূল অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দাবিদাওয়া বা সংস্কারের প্রয়োজন হলে রাস্তায় নয়, জনগণের দুয়ারে যেতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবিদাওয়া নিয়ে জনগণের কাছে যেতে হবে। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সংসদে এসে পাস করিয়ে নিতে হবে।’ আমীর খসরু আরও বলেন, ‘দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন না আনতে পারলে শত সংস্কার করেও সুফল মিলবে না। আমাদের মধ্যে সহনশীলতা আনতে হবে, অন্যের মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। দ্বিমত থাকলেও পরস্পরের প্রতি সম্মান বজায় রাখা উচিত।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য মনজুর হোসেন, জামায়াতে ইসলামীর যুক্তরাষ্ট্রের মুখপাত্র নকিবুর রহমান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ, হিসাববিদ স্নেহাশীষ বড়ুয়া, কাউন্টারপার্টের নির্বাহী সম্পাদক জ্যোতি রহমান, চালডালের সিইও ওয়াসিম আলিম প্রমুখ।
.png)
.png)
.png)



