
ছবি: সংগৃহীত
গাজীপুরের আলোচিত সাংবাদিক তুহিন হত্যা মামলায় সরাসরি ৮ জনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার ড. মো. নাজমুল করিম খান। এর মধ্যে ৭ জনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ, আরেকজন এখনো পলাতক। শনিবার (৯ আগস্ট) গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তরে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে কমিশনার এসব তথ্য তুলে ধরেন।
কমিশনার নাজমুল করিম বলেন, তুহিনকে হত্যা করার পেছনে মূল কারণ ছিল হানিট্র্যাপ চক্রের অবৈধ কার্যক্রমের ভিডিও ধারণ। চক্রটির সদস্যরা নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে এবং তথ্য ফাঁস ঠেকাতে পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। “আমরা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই তাদের বিচার নিশ্চিত করব,” যোগ করেন তিনি।
জিএমপি কমিশনার জানান, সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ৮ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন—
কেটু মিজান – মামলার প্রধান আসামি, যার নামে ১৫টি মামলা রয়েছে।
পারুল আক্তার ওরফে গোলাপি – কেটু মিজানের স্ত্রী, হানিট্র্যাপ কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতেন।
আল আমিন – যার নামে ২টি মামলা রয়েছে।
স্বাধীন – ২টি মামলার আসামি।
শাহজালাল – যার বিরুদ্ধে ৮টি মামলা রয়েছে।
ফয়সাল হাসান – হত্যাকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত।
সাব্বির – যার নামে ২টি মামলা রয়েছে।
এছাড়া আরমান নামে আরও এক আসামি পলাতক রয়েছেন, তাকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
কমিশনার বলেন, “আমরা আসামিদের গ্রেফতার করেছি, হত্যার অস্ত্র উদ্ধার করেছি, সিসিটিভি ফুটেজ হাতে রয়েছে এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণও সংগ্রহ করা হয়েছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট হাতে পেলেই যত দ্রুত সম্ভব চার্জশিট দেওয়া হবে বলে আশা করছি।” তিনি আরও জানান, সংগৃহীত ভিডিও ফুটেজ ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে, যাতে প্রমাণের মান ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত হয়।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জিএমপি কমিশনার সাম্প্রতিক অপরাধ প্রবণতার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “৫ আগস্টের পর গাজীপুরের অসংখ্য গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে হাজার হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। পেটের দায়ে কিছু শ্রমিক অপরাধের পথে পা বাড়াচ্ছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “গাজীপুরকে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই দেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে এখানে নানাভাবে অপকর্ম চালানো হচ্ছে।”
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জনবল সংকটের বিষয়েও কথা বলেন নাজমুল করিম খান। তার ভাষায়, “ফোর্সের সংখ্যা সীমিত হওয়ায় সব জায়গায় শতভাগ নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। তবুও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে।”
এই ঘটনায় গাজীপুরে সাংবাদিক মহল ও স্থানীয় জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ বিরাজ করছে। তারা দ্রুত বিচার নিশ্চিতের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ