
ছবি: সংগৃহীত
গাজীপুর মহানগরের ব্যস্ততম জয়দেবপুর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে স্থানীয় সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিনকে। তিনি দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি ছিলেন এবং দীর্ঘদিন ধরে চৌরাস্তা এলাকার কয়েকটি সামাজিক ও ক্রীড়া ক্লাবের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাত ৮টার কিছু পরেই এ ঘটনা ঘটে, যা মুহূর্তেই পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়।
সহকর্মীদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক ঘণ্টা আগে তুহিন চৌরাস্তা এলাকার ভাসমান দোকানগুলোর ভিডিওচিত্র ধারণ করে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আপলোড করেন। ভিডিও পোস্টের পর তিনি মসজিদ মার্কেটের গলিতে অবস্থিত একটি চায়ের দোকানে বসে ছিলেন। সেখানে চা পান করার সময়ই দুর্বৃত্তরা তাকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, রাত ৮টার দিকে ব্যস্ততম চৌরাস্তা এলাকায় ফিল্মি স্টাইলে ঘটে যায় ঘটনাটি। কয়েকজন সশস্ত্র যুবক হঠাৎ করেই চায়ের দোকানে ঢুকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তুহিনের ওপর আক্রমণ চালায়। মুহূর্তের মধ্যে একের পর এক কোপ পড়ে তার শরীরে। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। আক্রমণকারীরা অত্যন্ত দ্রুত এলাকা ত্যাগ করে, যেন পূর্ব পরিকল্পিত একটি অভিযানের মতোই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী খায়রুল ইসলাম বলেন, “আমি দোকানে বসেছিলাম। হঠাৎ তুহিন দৌঁড়ে এসে আমার দোকানে ঢুকে পড়ে। তার পেছনে তিনজন ঢুকে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। বাইরে দুজন রামদা হাতে দাঁড়িয়ে ছিল। আমি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে আমাকেও হত্যার হুমকি দেয়। ঘটনাটি এত দ্রুত ঘটেছে যে কেউ এগিয়ে আসার সাহস পায়নি।”
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, “ঘটনাটি রাত ৮টা ৫ মিনিটের দিকে ঘটেছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, হত্যার পেছনে প্রচণ্ড ক্ষোভ বা ব্যক্তিগত শত্রুতা কাজ করেছে। আমরা আশা করছি, খুব দ্রুত এ ঘটনার সুরাহা করতে পারব।”
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মো. রবিউল হাসান বলেন, “আমরা কিছু ভিডিও ফুটেজ ও গুরুত্বপূর্ণ ক্লু সংগ্রহ করেছি। জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু হয়েছে। একজন সাংবাদিককে প্রকাশ্যে এভাবে হত্যা করা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং নিন্দনীয়।”
প্রকাশ্যে, জনসমাগমপূর্ণ এলাকায়, দিনের আলো ফুরানোর পরেও এমন হত্যাকাণ্ডে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেছেন, ঘটনাস্থলে অনেকেই উপস্থিত থাকলেও কেউ তুহিনকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেনি, কারণ হামলাকারীদের হাতে ছিল ভয়ংকর ধারালো অস্ত্র এবং তারা অত্যন্ত আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে হামলা চালাচ্ছিল।
এ ঘটনার পর চৌরাস্তা এলাকা জুড়ে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে একাধিক দোকান ও সড়কের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এখন গাজীপুরবাসীর নজর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিকে—তারা কত দ্রুত এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের আসল রহস্য উদঘাটন করে দোষীদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারে, সেটাই বড় প্রশ্ন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ