
ছবি: সংগৃহীত
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রস্তুতির গতি বাড়িয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশনের সর্বশেষ পরিকল্পনা অনুযায়ী, ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হবে এবং ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হবে। লক্ষ্য একটাই—রোজা শুরুর আগেই নতুন সরকারকে শপথবদ্ধ করা, যাতে প্রশাসনিক ধারাবাহিকতা বজায় থাকে এবং নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে কমিশনের দীর্ঘ বৈঠক। বৈঠক শেষে রাতে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বিস্তারিত জানান। তিনি বলেন, “নির্বাচনের আনুমানিক ৬০ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করার নিয়ম অনুযায়ী, আমরা ডিসেম্বরের প্রথমার্ধেই এটি করব। রোজা যদি হয় ১৮ ফেব্রুয়ারি, তাহলে নতুন সরকারের শপথের জন্য অন্তত কয়েকদিন সময় রাখতে হবে। তাই ভোট অবশ্যই রোজার আগে শেষ হবে।”
সভায় রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য আচরণবিধি চূড়ান্ত করা হয়। নতুন বিধিতে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হলো—নির্বাচনি প্রচারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও ড্রোন ব্যবহারের সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা। এর কারণ হিসেবে কমিশনার সানাউল্লাহ জানান, ভুয়া তথ্য, বিভ্রান্তি ও অপপ্রচারের ঝুঁকি রোধ করতেই এ সিদ্ধান্ত। “এআই শুধু প্রার্থী বা দল নয়, বাইরের অনেক প্রতিষ্ঠানও ব্যবহার করতে পারে। আমরা ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করেছি, যারা এসব প্রতিরোধে কাজ করছে,” বলেন তিনি।
এবার ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তারা ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন। সানাউল্লাহ বলেন, “নবীন ভোটারদের জন্য এটি সুখবর। আমরা চাই যত বেশি তরুণ ভোটার নির্বাচনে অংশ নিক।” এজন্য আরেকবার খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ইসি বৈঠকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার প্রয়োগ সহজ করার বিষয়েও আলোচনা হয়। এবার প্রবাসীদের কাছে প্রতীকসংবলিত ব্যালট পাঠানো হবে, যাতে তারা প্রার্থীর প্রতীকে সরাসরি ভোট দিতে পারেন। এজন্য প্রবাসীদের আগে নিবন্ধন করতে হবে। সানাউল্লাহ বলেন, “পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থায় এবার তিন শ্রেণির মানুষ ভোট দিতে পারবে—প্রবাসী, কারাবন্দি এবং ভোটের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা।” কারাগারে থাকা ভোটারদের জন্য কারা কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করবে বলেও তিনি জানান।
বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনের প্রধান আইন ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ’ (আরপিও) সংশোধন নিয়েও আলোচনা হয়। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি; বৈঠকটি মুলতুবি করা হয়েছে। আদালতের আদেশে প্রার্থী পরিবর্তন হলে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়া সম্ভব হবে না, তাই আইনি প্রক্রিয়া দ্রুত করার ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে বলে কমিশনার উল্লেখ করেন।
ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের বিষয়েও ইসি কাজ করছে। তবে ৪৫ হাজার কেন্দ্রের জন্য এত বড় পরিসরে সিসি ক্যামেরা কেনা বা সংরক্ষণের বাস্তবতা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সানাউল্লাহ বলেন, “এক দিনের জন্য ভাড়ায় নেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় আছে, কিন্তু কেনা যৌক্তিক হবে কি না, সেটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।”
সব মিলিয়ে ইসি চাইছে এমন একটি নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করতে, যেখানে প্রযুক্তি অপব্যবহার ঠেকানো যাবে, নবীন ও প্রবাসী ভোটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে, আর ভোটের ফল নিরপেক্ষভাবে গৃহীত হবে। ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণার পরই শুরু হবে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনি কার্যক্রম, যা শেষ হবে রোজার আগেই নতুন সরকারের শপথের মাধ্যমে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ