
ছবি: সংগৃহীত
দেশের পুঁজিবাজারে চলতি সপ্তাহে সূচকের সামগ্রিক পতন সত্ত্বেও বাজার মূলধনের দিক থেকে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাপ্তাহিক হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সপ্তাহ শেষে ডিএসইর বাজার মূলধনে যুক্ত হয়েছে আরও ২ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা। এ বৃদ্ধি ঘটেছে এমন এক সময়ে, যখন প্রধান ও খাতভিত্তিক সূচকগুলো নিম্নমুখী এবং লেনদেনের পরিমাণও কিছুটা কমেছে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে জমা দেওয়া ডিএসইর সাপ্তাহিক প্রতিবেদন অনুসারে, সপ্তাহ শেষে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ১৫ হাজার ৭৯ কোটি টাকা। এর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে এই অঙ্ক ছিল ৭ লাখ ১২ হাজার ২২৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে বাজার মূলধন বেড়েছে প্রায় ০.৪০ শতাংশ বা ২ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সূচকের পতন এবং লেনদেনের ওঠানামার মাঝেও বাজার মূলধন বৃদ্ধির অর্থ হচ্ছে, বিনিয়োগকারীরা এখনো কিছু নির্দিষ্ট সেক্টরের শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডে আস্থা রাখছেন। বড় মাপের কোম্পানির শেয়ারমূল্যে তুলনামূলক স্থিতিশীলতা বাজার মূলধন ধরে রাখতে এবং বাড়াতে সহায়তা করেছে।
তবে বাজার মূলধন বাড়লেও সূচকের চিত্র ইতিবাচক ছিল না। সপ্তাহ শেষে প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৩৫.৩৫ পয়েন্ট বা ০.৬৫ শতাংশ কমে গেছে। খাতভিত্তিক সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক কমেছে ১৬.৬৫ পয়েন্ট বা ০.৭৯ শতাংশ এবং শরিয়াহভিত্তিক ডিএসইএস সূচক কমেছে ০.১৮ পয়েন্ট বা ০.০২ শতাংশ।
সূচকের এই পতনের পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে বাজারে স্বল্পমেয়াদি বিক্রয়চাপ, বিনিয়োগকারীদের লাভ তুলে নেওয়ার প্রবণতা এবং কিছু খাতে নতুন বিনিয়োগে সতর্ক মনোভাবকে দায়ী করা হচ্ছে।
চলতি সপ্তাহে ডিএসইতে মোট লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬৪৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর আগের সপ্তাহে এই পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ১৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহ ব্যবধানে মোট লেনদেন কমেছে ৫৪৮ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
যদিও মোট লেনদেন কমেছে, তবে গড়ে প্রতিদিনের লেনদেন বেড়েছে। চলতি সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৯১১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, যা আগের সপ্তাহের প্রতিদিনের গড় ৮৩৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকার তুলনায় ৭২ কোটি ৫১ লাখ টাকা বা ৮.৬৪ শতাংশ বেশি।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট ৩৯৫টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১৩৮টির দর বেড়েছে, ২২৭টির কমেছে এবং ৩০টির দর অপরিবর্তিত ছিল। এ থেকে বোঝা যায়, সামগ্রিকভাবে বাজারে বিক্রয়চাপ বেশি থাকলেও কিছু কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণ ধরে রাখতে পেরেছে।
দেশের দ্বিতীয় শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) সূচকগুলোতে সামান্য পতন দেখা গেছে। সপ্তাহ শেষে প্রধান সূচক সিএএসপিআই কমেছে ০.০৬ শতাংশ এবং দাঁড়িয়েছে ১৫,১৯৩.০২ পয়েন্টে। একই সময়ে সিএসসিএক্স সূচক কমেছে ০.০৯ শতাংশ এবং অবস্থান করছে ৯,৩১৭.০৫ পয়েন্টে।
খাতভিত্তিক সূচকের মধ্যে সিএসই-৫০ কমেছে ০.৫৯ শতাংশ (১,১৭৯.০৭ পয়েন্টে) এবং সিএসই-৩০ কমেছে ০.৩২ শতাংশ (১৩,৪৩৭.৮৪ পয়েন্টে)। তবে সিএসআই সূচক বেড়েছে ০.৮৫ শতাংশ এবং বর্তমানে অবস্থান করছে ৯৫৬.২৮ পয়েন্টে, যা সিএসইতে কিছু খাতে ইতিবাচক প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে সপ্তাহজুড়ে লেনদেন হয়েছে মোট ১১১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, যা আগের সপ্তাহের ৮১ কোটি ৮১ লাখ টাকার তুলনায় ২৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা বেশি।
সপ্তাহে সিএসইতে মোট ৩১৪টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ১৬০টির দর বেড়েছে, ১৩৬টির কমেছে এবং ১৮টির দর অপরিবর্তিত ছিল।
পুঁজিবাজারের সামগ্রিক চিত্র থেকে দেখা যাচ্ছে, সূচকের পতন এবং মোট লেনদেনের পরিমাণ কমলেও বাজার মূলধনের বৃদ্ধিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা মনে করছেন, বড় মূলধনী ও মৌলভিত্তিক শক্তিশালী কোম্পানির শেয়ারমূল্য স্থিতিশীল থাকায় মূলধন ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে।
তবে বাজারে স্থায়ী চাঙ্গাভাব ফেরাতে নীতি সহায়তা, বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং বাজারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। আগামী সপ্তাহগুলোতে বিনিয়োগকারীদের চোখ থাকবে কোম্পানিগুলোর ত্রৈমাসিক আর্থিক প্রতিবেদন এবং সামষ্টিক অর্থনীতির নতুন কোনো ঘোষণার দিকে, যা বাজারের গতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ