
ছবি: সংগৃহীত
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) থেকে যুক্তরাষ্ট্র অভিমুখী বাংলাদেশের পণ্যে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর হয়েছে। তবে এই নতুন শুল্ক আরোপের শেষ মুহূর্তে বন্দরগুলোতে রপ্তানিতে ব্যাপক চাপ তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে দেশের প্রধান বন্দর চট্টগ্রামে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা পোশাক ও অন্যান্য পণ্যের ওপর এই পাল্টা শুল্ক শুরু হওয়ায় প্রস্তুতিমূলক শেষ মুহূর্তের গতি বেড়েছে।
সকাল ১০টার পর থেকে বন্দর থেকে জাহাজে তোলা পণ্যে নতুন শুল্ক প্রযোজ্য হবে। বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই সময়ের আগ পর্যন্ত জাহাজীকরণের পণ্য ২০ শতাংশ শুল্ক থেকে মুক্ত থাকবে। এই সুযোগে কয়েকদিন ধরেই বন্দরগুলোতে রপ্তানিকারকরা পণ্য আগাম পৌঁছানোর জন্য দৌড়ঝাঁপ চালাচ্ছেন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র অভিমুখী পণ্যবোঝাই ট্রাক ও লরিগুলোকে বন্দর প্রবেশে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে, যাতে পণ্য দ্রুত জাহাজে তোলা যায়।
চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন প্রায় ৮০০ কনটেইনার অতিরিক্ত পণ্য রপ্তানির জন্য আসছে, যা স্বাভাবিক চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি।
গত ৩১ জুলাই বাংলাদেশের এবং মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে তৃতীয় দফার বৈঠক শেষে একটি সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়। এর মাধ্যমে শুল্ক কমিয়ে ৩৫ শতাংশে আনা হয়েছে, যেখানে আগে ৩৭ শতাংশ ছিল। তবে এই ৩৫ শতাংশ শুল্ক ছাড়াও আগে থেকেই গড়ে প্রায় ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল বাংলাদেশের পণ্যে। ফলে মোট শুল্কের পরিমাণ মোটামুটি স্থিতিশীল হলেও নতুন কাঠামোয় পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশে সীমাবদ্ধ হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দীন আহমেদ গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেন, “শুল্ক কমানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দরকষাকষির আরও সুযোগ রয়েছে।” তিনি উল্লেখ করেন, মার্কিন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার আলাপ হয়েছে এবং তারা বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করছে।
বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তফা আবিদ খান বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যবিষয়ক সাধারণ অভিজ্ঞতা অনুসারে আমদানিকারক দেশের শুল্ক আদায়ের সময়কাল রপ্তানিকারক দেশের বন্দরে পণ্য ছাড়ানোর সময় থেকে শুরু হয়। তিনি বলেন, ২ এপ্রিল ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত ১০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক ৫ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছিল, যা এখন ২০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
মোস্তফা আবিদ আরও বলেন, নতুন শুল্ক কাঠামোয় মার্কিন ন্যূনতম ২০ শতাংশ কাঁচামাল ব্যবহারের প্রাধান্য দেয়া পণ্যগুলো পাল্টা শুল্ক থেকে মুক্ত থাকবে। বাংলাদেশ পোশাক খাতে তুলার উপর অনেকটাই নির্ভরশীল, যেখানে তুলা আমদানির বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে হয়। ফলে এই সুযোগ বাংলাদেশকে তুলনামূলকভাবে এগিয়ে রাখবে বলে তিনি মনে করেন।
বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, ৭ আগস্টের সময়সীমার মধ্যে বন্দরে পণ্য পৌঁছানোর জন্য রপ্তানিকারীরা তৎপরতা চালাচ্ছেন। আগাম উৎপাদিত পণ্য অনেকটাই ইতোমধ্যে ১ আগস্টের আগেই জাহাজে তোলা হয়েছে। ফলে গত জুলাই মাসে রপ্তানি ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
চট্টগ্রামের ১৯টি কনটেইনার ডিপোতে রপ্তানির জন্য ১৫ হাজার ৪০০টি কনটেইনার জমা হয়েছে, যার বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্র গামী পণ্য। ডিপোগুলো থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার কনটেইনার রপ্তানি হয়, কিন্তু গত জুলাই মাসে প্রায় ৯৯ হাজার কনটেইনার বন্দর এলাকায় জমা হয়েছিল, যার মধ্যে ৮১ হাজার রপ্তানি হয়েছে।
কনটেইনার ডিপো সমিতির মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, “পাল্টা শুল্ক এড়াতে রপ্তানিকারকরা আগেভাগে পণ্য পাঠিয়েছেন ডিপোতে, যার কারণে আগস্টেও বন্দর থেকে আমেরিকামুখী কনটেইনার পাঠানোর হার বেশি থাকবে।”
এশিয়ান-ডাফ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালাম জানিয়েছেন, জুলাই মাসে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ছিল প্রায় ৩৯৬ কোটি মার্কিন ডলার, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রগামী পোশাক রপ্তানি ছিল প্রায় ৮২ কোটি ডলার। এই পরিমাণের ৬০ শতাংশই চট্টগ্রাম বন্দরে হয়ে থাকে।
রপ্তানিতে এই নতুন শুল্কের প্রভাব সাময়িক হলেও দেশের পোশাক খাত ও সংশ্লিষ্ট শিল্পে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রভাব ফেলবে বলে ব্যবসায়ীরা আশাবাদী। বিশেষ করে শুল্ক কমানোর জন্য দরকষাকষি সফল হলে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি পুনরায় বেগবান হতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ