
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ নারী ফুটবল ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমন একটি মাইলফলকে পৌঁছেছে, যা দেশের খেলাধুলার অঙ্গনে এক গৌরবময় অধ্যায় হয়ে থাকবে। ফিফা নারী ফুটবলের সর্বশেষ র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ নারী দল অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করে এক লাফে ২৪ ধাপ এগিয়ে উঠে এসেছে ১০৪তম অবস্থানে।
বুধবার, ৭ আগস্ট ২০২৫-এ ফিফা এই র্যাঙ্কিং প্রকাশ করে। নারী ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থার এই তালিকায় এত বড় অগ্রগতি বাংলাদেশের আগে কখনো ঘটেনি। শুধু অবস্থানে নয়, রেটিং পয়েন্টেও এসেছে রেকর্ড উন্নতি।
বাংলাদেশের পয়েন্ট ৮০.৫১ বাড়িয়ে দাঁড়িয়েছে ১১৭৯.৮৭-এ, যা আগের রেটিং ১০৯৯.৩৬ থেকে অনেক এগিয়ে। এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল নিজের অবস্থান যেমন শক্তিশালী করেছে, তেমনি ভবিষ্যতের সম্ভাবনার দরজাও উন্মুক্ত করেছে।
বাংলাদেশ নারী দলের এই বিরাট সাফল্যের পেছনে রয়েছে সাম্প্রতিক কিছু নজরকাড়া পারফরম্যান্স। বিশেষ করে এএফসি নারী এশিয়ান কাপ ২০২6 বাছাইপর্বে টানা তিনটি জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো মূলপর্বে জায়গা করে নিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক ফুটবল অঙ্গনে দেশের অবস্থানকে দৃঢ় করেছে।
এই টুর্নামেন্টে দলের ধারাবাহিক পারফরম্যান্স এবং প্রতিপক্ষকে মাঠে চাপে রাখার কৌশল প্রমাণ করেছে যে বাংলাদেশ নারী ফুটবল আর পিছিয়ে নেই। বরং প্রতিপক্ষরা এখন বাংলাদেশকে সমীহ করেই মাঠে নামছে।
নতুন র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ এখন অনেক পরিচিত ও তুলনামূলক শক্তিশালী ইউরোপীয় দলের সামনেই অবস্থান করছে বা খুব কাছাকাছি রয়েছে। নিচে দেখুন সাম্প্রতিক র্যাঙ্কিং অনুযায়ী কিছু প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের পয়েন্ট ও অবস্থান—
-
১০২: এস্তোনিয়া – ১১৮৯.৬৪ পয়েন্ট
-
১০৩: লিথুয়ানিয়া – ১১৮২.৬৮ পয়েন্ট
-
১০৪: বাংলাদেশ – ১১৭৯.৮৭ পয়েন্ট
-
১০৫: ফারো দ্বীপপুঞ্জ – ১১৭৭.১২ পয়েন্ট
এখানে স্পষ্ট, সামনের কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে জয় পেলেই বাংলাদেশ ১০৩ কিংবা ১০২ নম্বর অবস্থানে চলে যেতে পারে।
ফিফার প্রকাশিত এই র্যাঙ্কিং অনুসারে পরবর্তী হালনাগাদ হবে ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, অর্থাৎ আজ থেকে ১২৬ দিন পর। এর মধ্যে বাংলাদেশ যদি তাদের পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারে এবং আরও কিছু আন্তর্জাতিক ম্যাচে জয় পায়, তাহলে ফিফার নারী র্যাঙ্কিংয়ে প্রথমবারের মতো টপ-১০০-এ প্রবেশের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাবে।
এমন একটি মাইলফলক কেবল র্যাঙ্কিং নয়, বরং দেশের ফুটবলের মান, বিনিয়োগ, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, স্পনসরশিপ এবং ভবিষ্যৎ প্রতিভা বিকাশের পথও সুগম করবে।
নারী ফুটবলে এই সাফল্যের পেছনে একাধিক উপাদান কাজ করেছে। দেশের ক্রীড়া সংস্থা, কোচিং স্টাফ, খেলোয়াড়দের পেশাদার মনোভাব এবং নিরলস পরিশ্রম সবকিছু মিলিয়েই এই উন্নতি এসেছে। বিশেষ করে বাফুফে (বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন) নারীদের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সক্রিয় ছিল।
শুধু ঘরোয়া লীগ নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশগ্রহণ ও প্রস্তুতির জন্য যে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার সুফলই এখন ধরা দিচ্ছে। নারী দলের জন্য নিরবিচারে ক্যাম্প, বিদেশে প্রস্তুতি ম্যাচ এবং মানসম্পন্ন কোচিং সাপোর্ট এই উত্তরণের অন্যতম নিয়ামক।
এই অর্জনের পর ক্রীড়া অঙ্গনে প্রশংসার ঝড় উঠেছে। জাতীয় দল, সাবেক খেলোয়াড়, ক্রীড়া সাংবাদিক ও সাধারণ ফুটবলপ্রেমীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিনন্দন জানাচ্ছেন নারী দলকে। অনেকেই বলছেন, এটাই সময় নারী ফুটবলে আরও বিনিয়োগ, আরও সুযোগ এবং আন্তর্জাতিক মানের কাঠামো গড়ার।
ফিফা নারী র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের এই বিশাল অগ্রগতি নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। শুধু একটি র্যাঙ্কিং নয়, এটি বাংলাদেশের নারী ফুটবলের আত্মবিশ্বাসের প্রতীক।
এখন লক্ষ্য হওয়া উচিত এই অর্জনকে ভিত্তি করে আরও বড় সাফল্যের পথে এগিয়ে যাওয়া। এশিয়ান কাপ মূলপর্বে শক্তিশালী পারফরম্যান্স, ফিফা টপ-১০০-এ প্রবেশ, এবং আন্তর্জাতিক ফুটবল মঞ্চে বাংলাদেশের অবস্থান আরও দৃঢ় করা—এটাই এখন সময়ের দাবি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ