
ছবি: সংগৃহীত
অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে দেশের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদের কার্যক্রমে দেখা গেছে নজিরবিহীন গতি ও কার্যকারিতা। চলতি বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে ৭৮ দশমিক ৪১ শতাংশ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়েছে, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারা।
এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের অগ্রগতি ও বর্তমান সরকারের পরিচালন-ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে গণমাধ্যমকে জানান, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এ পর্যন্ত উপদেষ্টা পরিষদের ৪১টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব বৈঠকে সর্বমোট ১৯৪টি সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হয়েছে এবং গৃহীত হয়েছে ৩১৫টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।
এই সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে ২৪৭টি সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে, যা শতকরা হিসাবে দাঁড়ায় ৭৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এটি সর্বোচ্চ বলে উল্লেখ করেন প্রেসসচিব।
তিনি বলেন, “এটি সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের সক্ষমতার প্রমাণ। প্রশাসনিক অগ্রগতির এই চিত্র জনগণের আস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে।”
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শুরু হয়, যা দুপুর নাগাদ শেষ হয়। পুরো বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের চলমান কর্মকাণ্ড, প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, মন্ত্রণালয়গুলোর কাজের অগ্রগতি, এবং বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতে পর্যালোচনা ও করণীয় নির্ধারণ করা হয়।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টা সকল মন্ত্রণালয় ও দপ্তরকে আরও দ্রুত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন এবং সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এটি সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠক। এর আগে গত ২০২৪ সালের ২০ নভেম্বর সচিবালয়ে প্রথমবারের মতো উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই প্রশাসনিক সংস্কার, দুর্নীতিরোধ এবং কার্যকর নীতিনির্ধারণে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। উপদেষ্টা পরিষদকে সামনে রেখেই সরকারের নীতিনির্ধারণী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে, যার ফলে বাস্তবায়নের হারও দ্রুততর হচ্ছে বলে প্রশাসনিক বিশ্লেষকদের মত।
প্রশাসন বিশ্লেষকদের মতে, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর এতো উচ্চ হারে বাস্তবায়ন—বিশেষ করে একটি অস্থায়ী বা অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে—একটি বিরল দৃষ্টান্ত।
তারা বলছেন, এটি সরকারের দক্ষতা এবং প্রতিশ্রুতি রক্ষার সদিচ্ছার পরিচায়ক। একই সঙ্গে এটি প্রশাসনের কার্যকারিতা ও গতিশীলতা বাড়ানোর দিকেও একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের এই উচ্চ হার প্রশাসনিক ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য রেকর্ড হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী দিনগুলোতে দেশ পরিচালনায় আরও সুসংগঠিত এবং স্বচ্ছতা-নির্ভর কাঠামো গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারের এই গতি এবং দায়বদ্ধতার দৃষ্টান্ত ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকেও আরও শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ