
ছবি: সংগৃহীত
দেশের অর্থনৈতিক ও কর ব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ এক উদ্যোগ হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংস্কারে অগ্রগতি এবং তার সময়সীমা বিষয়ে বুধবার (৬ আগস্ট) এক গুরুত্বপূর্ণ ব্রিফিং দেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দীন আহমেদ। সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, এনবিআরকে দুটি ভাগে বিভক্ত করার বিষয়ে দ্রুতগতিতে কাজ চলছে এবং ডিসেম্বরের মধ্যেই এই উদ্যোগের জন্য কিছু না কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
গত মে মাসে সরকার একটি অধ্যাদেশ জারি করে এনবিআরকে দুই ভাগে বিভক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিল। এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিসিএস (কর) ও বিসিএস (শুল্ক) ক্যাডারের ক্ষমতা ও সুবিধা সম্পর্কে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়, যা সংশ্লিষ্ট দুই ক্যাডারের মাঝে সমালোচনার ঝড় তোলে। এক ধরনের অভিযোগ উঠে যে, এই অধ্যাদেশের ফলে প্রশাসনিক ক্যাডারমুক্ত করা হচ্ছে এনবিআরকে, যা তাদের পক্ষে মোটেই গ্রহণযোগ্য ছিল না।
এরপর ওই দুই ক্যাডারের পক্ষ থেকে বড় ধরনের আন্দোলন শুরু হয়, যা সরকারের সঙ্গে তাদের দ্বন্দ্বের জন্ম দেয়। আন্দোলনের চাপ সামলাতে গিয়ে অনেক কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠানো হয় এবং পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হলেও, সমস্যা এখনো পুরোপুরি সমাধান হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে আজ অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দীন আহমেদ ব্রিফিংয়ে বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই বেশ কিছু তাৎক্ষণিক সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। তবে এনবিআরের বিভাগীয় বিভাজন নিয়ে আমরা দ্রুতগতিতে অধ্যাদেশ সংশোধন করে এটি বাস্তবায়ন করব।”
তিনি আরও জানান, ব্যাংক রেগুলেশন ও ক্যাপিটাল মার্কেট নিয়ে কিছু সংস্কার মাঝারি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আওতায় থাকায় সেগুলোতে সময় লাগবে, কিন্তু এনবিআরের বিষয়ে ত্বরান্বিত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে অবশ্যই ‘কিছু একটা’ কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার টার্গেট রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া ৩৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক সম্পর্কে জানতে চাইলে ড. সালেহউদ্দীন বলেন, “শুল্ক কমানো ভালো হতো, তবে এখন যে পরিমাণ কমানো হয়েছে তাতে কিছুটা স্বস্তি আছে।”
তিনি জানান, মার্কিন ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে এখনও চুক্তি সই হয়নি, এবং বিষয়টি চূড়ান্ত করার জন্য বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। বাংলাদেশ কোন পণ্যগুলোর শুল্ক কমাবে, কী আমদানি করব—এসব বিষয় আলোচনার আওতায় থাকবে।
অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, “অর্থনীতি অনেকটা খাদের কিনারা থেকে উঠে এসেছে, যদিও পুরোপুরি সাফল্য এখনও নয়।” তিনি বলেন, “আমরা এখন একটা স্বস্তির জায়গায় এসেছি, কিন্তু চ্যালেঞ্জ অনেক রয়েছে—মূল্যস্ফীতি, কর্মসংস্থান, জ্বালানি সংকট, ট্যারিফ, এবং সবচেয়ে বড় বিষয় হলো ব্যবসায়ীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা।”
এক প্রশ্নের উত্তরে ড. সালেহউদ্দীন বলেন, “নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ আমরা নিশ্চিত করব, এটি নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।” অর্থাৎ দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেও নির্বাচন আয়োজনের জন্য অর্থনৈতিক প্রস্তুতি সম্পূর্ণ রাখা হবে।
বাংলাদেশের কর ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক কাঠামো সংস্কারের জন্য এনবিআরের বিভাজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। দুই ভাগে বিভাজনের মাধ্যমে কর আদায়ে দক্ষতা বৃদ্ধি, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ, প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও দ্রুত সেবা প্রদান সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে এই প্রক্রিয়া সামাজিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে যে কোনও পরিবর্তনের মতো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। কর্মীদের আস্থা অর্জন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাই একমাত্র উপায় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
অর্থ উপদেষ্টার ঘোষণাকৃত সময়সীমা অনুসারে ডিসেম্বরের মধ্যে এনবিআর সংস্কার সংক্রান্ত প্রথম কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া গেলে কর ব্যবস্থা ও দেশের অর্থনীতি নতুন মাত্রা পাবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এসজে