
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আবারও বড় ধরনের স্বর্ণ চোরাচালান রোধ করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পরিচালিত এক বিশেষ অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে ৮ কেজি ১২০ গ্রাম ওজনের মোট ৭০টি স্বর্ণের বার, যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ১২ কোটি টাকা। এ ঘটনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সংশ্লিষ্ট ফ্লাইট কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং চোরাচালানের পেছনে থাকা চক্র শনাক্তে তদন্ত চলছে।
বৃহস্পতিবার, ৭ আগস্ট সকাল ৯টার দিকে কাতারের রাজধানী দোহা থেকে ঢাকায় অবতরণ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-৩২৬ ফ্লাইট। ফ্লাইটটি নামার পরই গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকা কাস্টমস হাউসের (এয়ারপোর্ট ইউনিট) একটি দল বিমানটির কার্গো হোল্ডে অভিযান চালায়। অভিযান পরিচালনা করেন কাস্টমসের ইনচার্জ যুগ্ম কমিশনার নাজমুন নাহার কায়সার এবং সহকারী কমিশনার এস এম সরাফত হোসেনের নেতৃত্বাধীন একটি দল।
বিমানটির সামনের কার্গো অংশ তল্লাশি চালিয়ে তারা কাপড়ে মোড়ানো ও কালো স্কচটেপ দিয়ে প্যাঁচানো অবস্থায় পরিত্যক্তভাবে রাখা ৭০টি সোনার বার খুঁজে পান। প্রথম নজরেই বোঝা যায় এটি কোনো আন্তর্জাতিক চোরাচালান চক্রের কাজ। উদ্ধার হওয়া সোনার ওজন ৮ কেজি ১২০ গ্রাম, যা সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে শাহজালালে কাস্টমসের হাতে ধরা পড়া অন্যতম বড় চালান।
ঢাকা কাস্টমস হাউস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, তারা আগেই চোরাচালানের একটি পরিকল্পনার খবর পায়। এরপর নির্দিষ্ট ফ্লাইটের কার্গো অংশে নজরদারি বাড়ানো হয়। সেই পরিকল্পনার ফলেই সফল হয় এই অভিযান।
কাস্টমস কমিশনার মুহম্মদ জাকির হোসেন বলেন, “বাংলাদেশ কাস্টমস দেশীয় অর্থনীতিকে সুরক্ষিত রাখতে বিদেশি মুদ্রা পাচার ও স্বর্ণ চোরাচালান রোধে সবসময় সচেষ্ট। এই অভিযান তারই অংশ। ভবিষ্যতেও এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে।” তিনি আরও জানান, উদ্ধারকৃত স্বর্ণ যথাযথ প্রক্রিয়া শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়া হবে।
এ ঘটনায় কাস্টমস আইন-২০২৩ এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিশেষ করে তদন্তে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এই প্রশ্নে— কীভাবে বিমানের কার্গো হোল্ডে এত বড় পরিমাণ স্বর্ণ প্রবেশ করলো? কারা এর সঙ্গে জড়িত? বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সংশ্লিষ্ট কর্মীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি কোনো একক চেষ্টার ফসল নয়; বরং এটি সুসংগঠিত একটি আন্তর্জাতিক চোরাচালান চক্রের অংশ হতে পারে। কারণ, বিমানের কার্গো হোল্ডে এভাবে সোনা লুকিয়ে আনা এবং সেটিকে এয়ারপোর্টে পরিত্যক্ত অবস্থায় রাখার বিষয়টি কোনো সচেতন পরিকল্পনা ছাড়া সম্ভব নয়। কাস্টমস কর্মকর্তারা এখন বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও কার্গো হ্যান্ডলিং প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে নজর রাখছেন।
এর আগে, গত মাসেও ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্ত থেকে ৩১টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করেছিল বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সীমান্ত ও বিমানবন্দর— দুই জায়গাতেই চোরাচালান বাড়তে থাকায় এটি এখন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।
বিমানবন্দরের মতো উচ্চ নিরাপত্তাবেষ্টিত স্থানে এভাবে সোনা চোরাচালান হওয়ার ঘটনা কেবলমাত্র আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর দক্ষতা নয়, নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাকেও সামনে আনছে। কাস্টমসের এই সফল অভিযান তাৎক্ষণিকভাবে একটি বড় চোরাচালান আটকাতে সক্ষম হলেও পেছনে থাকা মূল সিন্ডিকেট ধরা না পড়া পর্যন্ত এই সাফল্য আংশিকই থাকবে। এখন সময় হয়েছে পুরো চক্রকে বিচারের আওতায় আনতে কঠোর ও প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থা গ্রহণের।
বাংলাবার্তা/এমএইচ