
ছবি: সংগৃহীত
দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অঙ্গনে এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের প্রতিফলন ঘটেছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয়ের তরফ থেকে। আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, রোজার শুরু হওয়ার আগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে বুধবার (তারিখ অনুযায়ী) জানানো হয়, নির্বাচনের সুষ্ঠু ও অবাধ আয়োজন নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে সময়মত প্রস্তুতি গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া স্বাক্ষরিত চিঠিতে নির্বাচনের সময়সূচী ও গুরুত্বের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধেই নির্বাচন সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্বাচন কমিশন যেন দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু করে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গতকাল ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে স্পষ্ট ঘোষণা দেন যে, আগামী নির্বাচনে ভোট গ্রহণ যেন হয় উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, বিগত পনেরো বছরে দেশের জনগণ বিভিন্ন কারণে ভোটাধিকার প্রয়োগে অনিয়মের শিকার হয়েছেন। তাই এবারের নির্বাচন হবে সেই ধারা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন, যেখানে ভোটার উপস্থিতি থাকবে সর্বোচ্চ, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে শান্তি-শৃঙ্খলা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য যথাযথ সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চিঠিতে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, নির্বাচনে আধুনিক প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার গুরুত্ব। এটি নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নির্ভরযোগ্যতা বৃদ্ধি করবে।
তবে শুধু নির্বাচন কমিশনের নয়, সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতাও জরুরি এই প্রক্রিয়া সফল করার জন্য। প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয় নিশ্চিত করেছে, সরকারি প্রতিটি স্তর থেকে নির্বাচন আয়োজনে সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করা হবে, যাতে করে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্পন্ন হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রধান উপদেষ্টার এই উদ্যোগ দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় স্থিতিশীলতা আনবে এবং জনগণের মাঝে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করবে।
তারা আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা ও সময়মতো আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও এখন আশা করা যাচ্ছে, এই উদ্যোগ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের আস্থা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।
নির্বাচন কমিশনকে এখন রয়েছে যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণের চাপ। ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারকরণ, প্রযুক্তি ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, প্রার্থীদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া, এবং অবাধ ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ—এই সব বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে দ্রুত।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের চিঠি আসার পর নির্বাচন কমিশন দ্রুত একটি কর্মপরিকল্পনা হাতে নেবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে সময়সীমার মধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা চ্যালেঞ্জিং হলেও সরকারের সমর্থন থাকায় এটি সম্ভবপর হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ