
ছবি: সংগৃহীত
জাতির সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয় অধ্যায়। এর মূল লক্ষ্য ও প্রাধান্য হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বিস্তারিত অবহিত করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
প্রেস সচিব জানান, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পরিষ্কারভাবে উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলেছেন, “বর্তমানে সরকারের সর্বোচ্চ ও প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং সর্বসাধারণের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন করা।”
তিনি আরও বলেন, “জনগণ যেন তাদের ভোটাধিকার নির্বিঘ্নে প্রয়োগ করতে পারে এবং রাজনৈতিক দলসমূহ নির্বাচনে স্বাধীনভাবে অংশ নিতে পারে—এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করতেই অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করবে।”
প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, গত ৫ আগস্ট ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম অধ্যায়ের শেষ দিন। এখন শুরু হয়েছে দ্বিতীয় অধ্যায়, যার প্রতিটি পদক্ষেপ হবে গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পরিচালিত।
ড. ইউনূস বলেন, “আমরা এমন একটি নির্বাচন চাই, যা দেশ ও জাতিকে বিভক্ত করবে না, বরং ঐক্য, স্থিতিশীলতা এবং জনগণের আস্থার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং মিডিয়াসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে এই কাজটি সম্পন্ন করতে হবে।”
বৈঠকে শুধু রাজনৈতিক প্রসঙ্গ নয়, জাতীয় গুরুত্বের অন্যান্য বিষয়ও আলোচনায় আসে। এর মধ্যে বিশেষভাবে আলোচিত হয় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনার ঘটনা।
প্রেস সচিব বলেন, “ওই দুর্ঘটনায় শিক্ষক মেহেরিন চৌধুরীর সাহসিকতা এবং বুদ্ধিমত্তার জন্য উপদেষ্টা পরিষদ তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে তার নামে একটি বিশেষ পুরস্কার চালু করা হবে।”
এই উদ্যোগকে সভার সকল উপদেষ্টা স্বাগত জানান এবং মত দেন, দেশজুড়ে সাহসী নাগরিকদের উৎসাহিত করতে এমন উদাহরণ প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
সরকার সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই মাঠ প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। জেলা প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা এবং স্থানীয় পর্যায়ের অন্যান্য সংস্থাকে একটি নির্দিষ্ট রূপরেখা অনুযায়ী কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা সকল উপদেষ্টাদের বলেন, “আপনারা দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয়ে সার্বিক মনিটরিং রাখবেন এবং কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে তা দ্রুত তদন্ত ও সমাধান করবেন। গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন, যাতে তারা সরকারের প্রতি আস্থা বজায় রাখে।”
একাধিক উপদেষ্টা বৈঠকে মত দেন, নির্বাচনের সময়কালজুড়ে সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ বিষয়ে একমত পোষণ করে ড. ইউনূস বলেন, “এটি শুধু নীতিগত নয়, নৈতিক ও গণতান্ত্রিক দায়িত্বও। আমরা কোনো পক্ষের পক্ষে কাজ করবো না, বরং পক্ষপাতহীন অবস্থানে থেকে জনগণের ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপ দিতে কাজ করবো।”
অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক দায়িত্ব—একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করা। এ লক্ষ্যে উপদেষ্টা পরিষদ তাদের ভূমিকা স্পষ্ট করেছে এবং সেই অনুযায়ী কাজ শুরু করেছে।
নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য করে তুলতেই প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস নেতৃত্ব দিচ্ছেন একটি স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ রূপান্তরের দিকে, যেখানে দেশের জনগণের মতই হবে সর্বোচ্চ প্রাধান্যপ্রাপ্ত শক্তি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ