
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রুশনারা আলীকে ঘিরে সম্প্রতি এক বিতর্ক দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে। পূর্ব লন্ডনে নিজের মালিকানাধীন একটি টাউনহাউজ থেকে ভাড়াটিয়াদের উচ্ছেদ এবং পরবর্তীতে বাড়িটির ভাড়া একলাফে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় তিনি শুধু বিরোধীদলীয় সমালোচনার মুখেই পড়েননি, বরং শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিত্বের পদও হারিয়েছেন।
রুশনারা আলী লেবার পার্টির একজন প্রভাবশালী সদস্য এবং দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক ন্যায্যতা, ভাড়াটিয়াদের অধিকার ও সাশ্রয়ী আবাসন নিয়ে সোচ্চার ছিলেন। তাই তার এই পদক্ষেপ অনেকের কাছে দ্বিচারিতা বা ‘ভণ্ডামি’ হিসেবে প্রতীয়মান হয়।
ব্রিটিশ গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানা যায়, পূর্ব লন্ডনের একটি অভিজাত এলাকায় অবস্থিত নিজের টাউনহাউজে চারজন ভাড়াটিয়া বাস করছিলেন রুশনারার মালিকানাধীন সম্পত্তিতে। সম্প্রতি তিনি হঠাৎ করেই তাদের উচ্ছেদের নোটিশ দেন এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাসা ছাড়তে বাধ্য করেন। কয়েক সপ্তাহ পরই বাড়িটি নতুন ভাড়াটিয়ার কাছে ভাড়া দেন, তবে আগের তুলনায় মাসিক ভাড়া একলাফে ৭০০ পাউন্ড বাড়িয়ে।
এখানেই মূল বিতর্কের সূত্রপাত। কারণ, রুশনারা আলী অতীতে ভাড়াটিয়াদের শোষণ এবং অনৈতিক ভাড়া বৃদ্ধির বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা রাখলেও নিজের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিপরীত আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
রুশনারার ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র দাবি করেছে, তিনি মূলত ওই বাড়িটি বিক্রির পরিকল্পনা করেছিলেন। এ কারণে ভাড়াটিয়াদের বের করে দেওয়া হয়। তবে সম্ভাব্য ক্রেতা না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত বাড়িটি আবারও ভাড়া দেওয়া হয়। কিন্তু সেই ভাড়া আগের তুলনায় অনেক বেশি নির্ধারণ করায় পুরো বিষয়টি নেতিবাচক আলোচনায় চলে আসে।
বিরোধীদল কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ারম্যান কেভিন হলিনরেক ঘটনাটিকে ‘প্রকাশ্য ভণ্ডামি’ বলে উল্লেখ করে বলেন, “যিনি বছরের পর বছর ভাড়াটিয়াদের সুরক্ষা নিয়ে বক্তৃতা দেন, তিনিই নিজের সম্পত্তিতে এমন আচরণ করলেন—এটি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।”
স্কটিশ এমপি পিট উইশার্ট সরাসরি রুশনারার পদত্যাগ দাবি করেন। তিনি বলেন, এমন একজন ব্যক্তি সরকারের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করলে সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট হবে।
লন্ডন রেন্টারস ইউনিয়নের মুখপাত্র সিয়ান স্মিথও ঘটনাটিকে নিন্দা জানিয়ে বলেন, “একজন মন্ত্রী হিসেবে এটি সরাসরি স্বার্থসংঘাতের উদাহরণ। তিনি ব্যক্তিগত লাভের জন্য ভাড়াটিয়াদের অধিকার উপেক্ষা করেছেন।”
ভাড়াটিয়াদের অধিকার বিষয়ক সংস্থা ‘জেনারেশন রেন্ট’ এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
চাপ ক্রমেই বাড়তে থাকায় শেষ পর্যন্ত ২০২৫ সালের ৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার রুশনারা আলী তার মন্ত্রিত্বের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি পদত্যাগপত্রের একটি ছবি প্রকাশ করেন। যদিও পদত্যাগপত্রে তিনি বিতর্কের বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি, তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বিতর্কের প্রভাব তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
রুশনারা আলীর এই বিতর্ক শুধু ব্যক্তিগত ইমেজেই আঘাত হানেনি, বরং লেবার পার্টির ভেতরও এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি করেছে। সামাজিক ন্যায়বিচার ও ভাড়াটিয়াদের স্বার্থরক্ষায় সোচ্চার এক নেতার এমন কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতে দলের নীতি ও অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ব্রিটিশ এমপি একসময় ছিলেন অভিবাসী সম্প্রদায় এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষার অন্যতম কণ্ঠস্বর। কিন্তু সাম্প্রতিক এই ঘটনার ফলে তার ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মন্ত্রিত্ব ছাড়লেও রাজনৈতিক অঙ্গনে এই বিতর্কের রেশ দীর্ঘদিন ধরে চলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ