
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত অন্যতম বৃহৎ সামরিক ঘাঁটি ফোর্ট স্টুয়ার্টে ঘটে গেল এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা, যা দেশটির সামরিক নিরাপত্তা ও মনস্তাত্ত্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সোমবার সকালে (স্থানীয় সময় অনুযায়ী) ঘাঁটির অভ্যন্তরে আচমকাই গুলি চালানো হয়, যাতে আহত হয়েছেন পাঁচজন সেনা সদস্য।
ঘটনার নায়ক—অথবা খলনায়ক—হলেন সার্জেন্ট কোরনেলিয়াস র্যাডফোর্ড, যিনি একটি ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে তারই সহকর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি চালান। তার বয়স ২৮ বছর এবং তিনি দীর্ঘদিন ধরেই ঘাঁটিটিতে কর্মরত ছিলেন বলে জানা গেছে। গুলির ঘটনার পরপরই উপস্থিত সেনারা সাহসিকতার সঙ্গে তাকে প্রতিরোধ করে আটক করতে সক্ষম হন। এরপর পুরো ঘাঁটিতে সতর্কতা জারি করে সাময়িক লকডাউন ঘোষণা করা হয়।
ঘটনার পর দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আহতদের স্থানীয় সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তিনজনকে জরুরি অস্ত্রোপচার করতে হয়, বাকি দুইজনও চিকিৎসাধীন। ঘাঁটির কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জন লুবাস বলেন, ‘আহতদের অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল এবং তারা পর্যবেক্ষণে আছেন।’
জেনারেল লুবাস আরও বলেন, ‘ঘটনার সময় আশপাশে থাকা অন্যান্য সেনারা সাহসিকতার সঙ্গে র্যাডফোর্ডকে থামান, যার ফলে আরও বড় প্রাণহানির সম্ভাবনা রোধ করা সম্ভব হয়।’ তার ভাষায়, ‘এই সেনারা নিশ্চিতভাবেই আরও রক্তপাত ঠেকিয়েছেন। তাদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া প্রশংসার দাবিদার।’
এই হামলার স্পষ্ট কোনো উদ্দেশ্য এখনো সামনে আসেনি। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, র্যাডফোর্ড কেন গুলি চালিয়েছেন তা নিয়ে তারা এখনো নিশ্চিত নন। তদন্ত চলমান রয়েছে এবং সেনাবাহিনীর অপরাধ তদন্ত বিভাগ ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে।
একটি বিষয় স্পষ্ট—এটি কোনো বহিরাগত হুমকি ছিল না, বরং সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরেই এক সদস্যের হাতে অপর সদস্যরা আহত হয়েছেন, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
ফোর্ট স্টুয়ার্ট যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সুসজ্জিত এবং নিরাপদ সামরিক স্থাপনা হিসেবে পরিচিত। এমন একটি স্থানে অভ্যন্তরীণভাবে গুলি চালানোর মতো ঘটনা গোটা মার্কিন সামরিক বাহিনীর নিরাপত্তা ও মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে বাহিনীর সদস্যদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া জরুরি। আগ্নেয়াস্ত্রের সহজলভ্যতা ও তীব্র মানসিক চাপের সম্মিলন এ ধরনের সহিংসতার জন্ম দিতে পারে।
এটাই প্রথম নয়। এর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সেনাঘাঁটিতে এ ধরনের সহিংস ঘটনা ঘটেছে। ২০০৯ সালে টেক্সাসের ফোর্ট হুডে একজন সেনা চিকিৎসক তার সহকর্মীদের গুলি করে ১৩ জনকে হত্যা করেছিলেন। সেই ঘটনার স্মৃতি এখনো অনেকের মনে তাজা। এবার ফোর্ট স্টুয়ার্টে এমন ঘটনা সেই ভয়ানক স্মৃতির পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা তৈরি করছে।
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, একটি পূর্ণাঙ্গ আভ্যন্তরীণ তদন্ত চালানো হচ্ছে। তদন্তে র্যাডফোর্ডের মানসিক অবস্থা, তার সাম্প্রতিক আচরণ, দায়িত্বে কোনো ব্যত্যয়, এবং অস্ত্র রাখার নিয়ম-কানুন ভঙ্গ হয়েছে কিনা, এসব বিষয় গভীরভাবে খতিয়ে দেখা হবে।
এফবিআই ও সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতিনিধিরাও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছেন। ঘটনাটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলেই মনে করা হলেও, ভবিষ্যতে এমন হামলা রোধে সুরক্ষা ব্যবস্থা পর্যালোচনার দাবি জোরালো হয়েছে।
এই ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করে, সামরিক বাহিনীর অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে যে আত্মবিশ্বাস দীর্ঘদিন ধরে ছিল, তা আর আগের মতো অটুট নেই। প্রতিটি সেনার জীবন মূল্যবান—তাই ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যাতে না ঘটে, সেজন্য এখনই যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ