
ছবি: সংগৃহীত
গত কয়েক দিনের টানা ভারি বর্ষণ এবং ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলের ফলে তিস্তা নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের অন্যতম বৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজে বিপৎসীমা ধরা হয় ৫২ দশমিক ১৫ মিটার। শুক্রবার (৮ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে এই পয়েন্টে পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ঠিক বিপৎসীমায়—৫২ দশমিক ১৫ মিটার, যা বিপজ্জনক অবস্থার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ফলে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে নতুন করে বন্যার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তায় পানি বেড়েছে ২৯ সেন্টিমিটার। যদিও বর্তমানে পানি বৃদ্ধির গতি তুলনামূলক ধীর, তবুও বিপৎসীমা স্পর্শ করা অবস্থায় নদীর পানি অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকলে নিম্নাঞ্চলের জন্য তা মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দোমোহনী ও গজলডোবা এলাকায় পানি কিছুটা কমেছে। দোমোহনীতে শুক্রবার সকাল ৯টায় পানির স্তর ছিল ৮৫ দশমিক ৫৯ মিটার, যা রাত ৮টায় নেমে দাঁড়িয়েছে ৮৫ দশমিক ৫২ মিটারে—১১ ঘণ্টায় ৭ সেন্টিমিটার কমে। একই সময়ে গজলডোবা ব্যারাজে পানি ৫ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, উজানে পানি কমলেও ঢল নেমে আসার সময় ও স্থানীয় বর্ষণের কারণে বাংলাদেশের অংশে পানি কিছুটা সময় ধরে বাড়তে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্যমতে, রাত ১২টা পর্যন্ত তিস্তায় পানি কিছুটা বাড়তে পারে। এরপর উজানের পানি হ্রাসের প্রবণতা এবং স্থানীয় নদী অববাহিকার পরিস্থিতির কারণে পানির স্তর স্থিতিশীল থাকতে পারে। তবে এই স্বস্তি দীর্ঘস্থায়ী নাও হতে পারে, কারণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস আগামী তিন দিন ভারি বর্ষণের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, তিস্তা অববাহিকায় আগামী ৭২ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। এর ফলে তিস্তা নদীর পানি পুনরায় দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে এবং নতুন করে বন্যার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে তিস্তার তীরবর্তী লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চলগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকবে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, “গত কয়েক ঘণ্টায় পানি কিছুটা বেড়েছে ঠিকই, তবে এখনো বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই। আমরা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।” তিনি আরও জানান, স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে প্রাথমিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কয়েক দিনের বর্ষণ ও নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে তীরবর্তী এলাকার জমি, ফসলি খেত ও বাড়িঘর ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। অনেক পরিবার আগাম সতর্কতা হিসেবে গবাদি পশু ও মূল্যবান সামগ্রী নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে শুরু করেছে। ২০১৯ ও ২০২০ সালের ভয়াবহ বন্যার স্মৃতি এখনো তাজা থাকায় তারা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন।
সব মিলিয়ে, তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় উত্তরাঞ্চলের চারটি জেলার মানুষ নতুন করে বন্যার শঙ্কায় রয়েছে। উজানের পানি হ্রাসের ইতিবাচক লক্ষণ থাকলেও স্থানীয় বর্ষণ পরিস্থিতি আবারও জটিল করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ