
ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, এক বছর আগে ৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ও বহুল প্রত্যাশিত পরিবর্তন এসেছিল। সেই দিনটির পর দেশের মানুষ যেন হঠাৎ করে নতুন করে আশার আলো দেখতে পেরেছে এবং বুক ভরে শ্বাস নিতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু এ পরিবর্তন কেবল শুরু—এটিকে ধরে রাখতে ও এগিয়ে নিতে হলে সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।
শনিবার (৯ আগস্ট) লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ‘ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ (ড্যাব)-এর কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।
তারেক রহমান বলেন, “প্রত্যেক মানুষই পরিবর্তন চায়। এক বছর আগে ৫ আগস্ট সেই পরিবর্তন ঘটেছিল, যা বহুদিন ধরে মানুষ অপেক্ষা করছিল। আমার কাছে মনে হয়েছে, ওইদিন দেশের মানুষ প্রথমবারের মতো দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্বস্তি পেয়েছে। এরপর থেকেই তারা আরও ভালো ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, দেশের মানুষ ভালো পরিবর্তন চাইলেও তা রাতারাতি সম্ভব নয়। “বাস্তবতা হলো, মুহূর্তের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে না। কিন্তু পরিবর্তনের জন্য প্রথম পদক্ষেপ নিতে হবে—এটাই এখন জরুরি।”
বক্তৃতায় তিনি সাম্প্রতিক অতীতের মানবাধিকার পরিস্থিতির কথাও উল্লেখ করেন। তারেক রহমান জানান, “জুলাই-আগস্ট মাসেই প্রায় দেড় হাজার মানুষ গুম ও খুনের শিকার হয়েছেন। আর গত ১৫ বছরে এই সংখ্যা কয়েক হাজারে পৌঁছেছে। পাশাপাশি, কয়েক লাখ মানুষ বিভিন্নভাবে আহত হয়েছেন।”
তিনি বলেন, “এই ভুক্তভোগী মানুষগুলোর প্রত্যাশা যদি আমরা পূরণ করতে পারি, তাহলেই আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।”
তারেক রহমান দাবি করেন, দেশের মানুষ বিএনপির কাছে এখনো আশা রাখে। “মানুষ মনে করে, আগামী দিনে দেশ পরিচালনায় বিএনপির সম্ভাবনা বেশি। তাই তারা আমাদের কাছে পরিবর্তনের প্রত্যাশা করে। আমাদেরকে সেই শুরুটা করতে হবে।”
তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে গণতন্ত্র চর্চার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেন, “প্রচলিত একটি কথা আছে—দলগুলো গণতন্ত্রের কথা বলে, কিন্তু নিজেদের ভেতরে চর্চা করে না। তাহলে তারা কেমন করে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে? কথাটি পুরোপুরি ঠিক নয়, আবার ভুলও নয়। সীমাবদ্ধতার কারণে হয়তো সম্পূর্ণভাবে দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু হয়নি। তবে তা করতে হবে।”
তারেক রহমান স্মরণ করিয়ে দেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাকশাল প্রথা থেকে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেছিলেন। পরে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া স্বৈরশাসন বিদায় করে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
তিনি বলেন, “আমাদের নেতারা যে পথ দেখিয়েছেন, সেই উত্তরাধিকার বজায় রাখতে হবে। গণতন্ত্রের ভিত আরও মজবুত করতে হবে। স্থানীয় পর্যায় থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত, এমনকি দলের ভেতরে সব স্তরে গণতান্ত্রিক চর্চা গড়ে তুলতে হবে।”
ড্যাবের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে যোগ দিয়ে তারেক রহমান পেশাজীবীদের ভূমিকার উপরও গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় চিকিৎসকসহ সব পেশাজীবীর অংশগ্রহণ অপরিহার্য। “আপনাদের কাজ শুধু রোগীর চিকিৎসা নয়, বরং জাতির চিকিৎসাও। রাজনৈতিক সচেতনতা, নৈতিক দৃঢ়তা এবং জনগণের পাশে দাঁড়ানো—এসবই আজকের দিনে অত্যন্ত প্রয়োজন।”
বক্তৃতার শেষ পর্যায়ে তিনি বলেন, দেশের মানুষ যেমন স্বপ্ন দেখে, তেমনি তারা চায় বাস্তব পদক্ষেপ। সেই পদক্ষেপ নিতে হলে সাহস, পরিকল্পনা ও ঐক্য অপরিহার্য। “আমরা যদি শুরুটা সঠিকভাবে করতে পারি, তাহলে আমাদের গন্তব্য হবে সেই বাংলাদেশ—যেখানে গণতন্ত্র শক্তিশালী, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত এবং মানুষের অধিকার সুরক্ষিত।”
বাংলাবার্তা/এমএইচ