
ছবি: সংগৃহীত
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটারদের আস্থা পুনরুদ্ধার করে কেন্দ্রে নিয়ে আসাকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি স্বীকার করেছেন, গত নির্বাচনে কিছু প্রিজাইডিং অফিসার ভোট গ্রহণে সমস্যার সৃষ্টি করেছিলেন। এমন কর্মকর্তাদের এবার না রাখার চেষ্টা করা হলেও, নানা প্রশাসনিক কারণে তাদের পুরোপুরি বাদ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) তাদের আচরণ ও কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে এবং প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেবে।
শনিবার (৯ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিইসি এসব কথা বলেন। সভায় রংপুর বিভাগের প্রতিটি জেলার নির্বাচনী কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সিইসি বলেন, “বর্তমানে নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ক্ষুণ্ন হয়েছে। অনেকে মনে করেন, ভোট দিলেও তার সঠিক প্রতিফলন পাওয়া যায় না। এ কারণে ভোটারদের কেন্দ্রে আনা এখন আমাদের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ।” তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কাঠামো ও জনবল সুশৃঙ্খলভাবে সাজিয়ে কমিশন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, কমিশনের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়া বজায় রাখার মাধ্যমে জনগণের আস্থা ফিরে আসবে। “নির্বাচন কমিশন কারো পক্ষে বা বিপক্ষে কাজ করবে না। ১৮ কোটি মানুষের হয়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য,” যোগ করেন সিইসি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানান, বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে, যা নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করতে পারে। এসব প্রতিরোধে কমিশন সচেষ্ট এবং প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, “ভোট দেওয়া শুধু নাগরিক দায়িত্ব নয়, এটি এক ধরনের ঈমানি দায়িত্বও। তাই প্রত্যেককে তাদের এই কর্তব্য পালন করতে হবে।” তিনি ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান, গুজব বা বিভ্রান্তিতে কান না দিয়ে ভোটের দিন কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে।
সিইসি জানান, নির্বাচনের সময় সংবাদ সংগ্রহের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হবে। তবে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে সরাসরি সম্প্রচার থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি। এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, সরাসরি সম্প্রচার কখনও কখনও ভোটারদের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় আতঙ্ক বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে।
মতবিনিময় সভা শেষে বিকেলে সিইসি রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের হলরুমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেখানে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসারসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। বৈঠকে নির্বাচনী সহিংসতা রোধ, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র চিহ্নিতকরণ এবং নিরাপত্তা জোরদারসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, “আমরা চাই আগামী নির্বাচন আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হোক। যাতে দেশ-বিদেশের সবাই স্বীকার করে, এই নির্বাচন ছিল সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ।” তিনি আরও বলেন, “আস্থা ফেরানো, বিভ্রান্তি মোকাবিলা এবং আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত—এই তিনটি বিষয়কে সামনে রেখেই আমাদের সমস্ত প্রস্তুতি চলছে।”
বাংলাবার্তা/এমএইচ