
ছবি: সংগৃহীত
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আগামী রোববার ১১ আগস্ট দেশের জন্য হালনাগাদ খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে যাচ্ছে। এটি ভোট প্রক্রিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, যা দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ ও সঠিক করার লক্ষ্যে নেয়া হয়েছে। নির্বাচনের জন্য এখন থেকে মাত্র কয়েক মাস বাকি, তাই এই খসড়া তালিকার মাধ্যমে ভোটাররা নিজের বা পরিবারের সদস্যদের তথ্য যাচাই ও সংশোধনের সুযোগ পাবেন, যাতে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা হয় একদম নিখুঁত ও সম্পূর্ণ।
এবারের খসড়া ভোটার তালিকায় প্রায় ৪৪ লাখ নতুন ভোটার যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে, যা দেশের ভোটার সংখ্যা আরও বাড়িয়ে আনবে। বর্তমানে দেশের মোট ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ২৭৪ জন। নতুন এই ভোটারদের অন্তর্ভুক্তি ও পুরনো তালিকার সঠিকতা যাচাইয়ের মাধ্যমে ইসি দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে আরো বেশি গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু করতে চায়।
নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, খসড়া তালিকা প্রকাশের পর জনগণকে তথ্য যাচাই ও সংশোধনের জন্য পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হবে, যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলে ভোটার থেকে বঞ্চিত না হন।
খসড়া তালিকা প্রকাশের পর সংশোধন বা আপত্তি জানানো যাবে ১২ দিন পর্যন্ত, অর্থাৎ ২১ আগস্ট পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে ভোটাররা নিজেরা অথবা সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে নাম অন্তর্ভুক্তি, মৃত্যুজনিত কারণে বাদ পড়া নাম পুনর্বিচার, ভোটার স্থানান্তর ও অন্যান্য ত্রুটি সংশোধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
একাধিক অভিযোগ ও সংশোধনের প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্পত্তির জন্য উপজেলা কর্মকর্তারা খসড়া তালিকা বিভিন্ন নির্দিষ্ট স্থানে সাঁটিয়ে দেবেন, যাতে সহজে কেউ তার তথ্য যাচাই করতে পারেন।
আবেদনগুলো ইসির কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ২৪ আগস্টের মধ্যে নিষ্পত্তি করবেন। এর পর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ৩১ আগস্ট প্রকাশ করা হবে, যা নির্বাচন পরিচালনার জন্য সরকারি ও রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রাথমিক তথ্য হিসেবে সরবরাহ করা হবে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ নিশ্চিত করতে ভোটার তালিকার যথাযথ হালনাগাদ অপরিহার্য। ভুল তথ্য বা অনুপস্থিত ভোটার থাকলে তা ভোট প্রক্রিয়ায় অসঙ্গতি সৃষ্টি করে, যা দেশের গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা হ্রাস করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “ভোটার তালিকার সঠিকতা নির্বাচন প্রক্রিয়ার ভিত্তি। এ জন্য খসড়া তালিকার মাধ্যমে যে সংশোধন ও যাচাই করা হয় তা নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।”
অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, “ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধি এবং সঠিক তথ্যের উপর ভিত্তি করে নির্বাচন পরিচালনা করাই দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মূল চাবিকাঠি।”
বিগত কয়েক বছরে ইসি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভোটার তালিকা তৈরিতে ব্যাপক অগ্রগতি করেছে। মোবাইল অ্যাপ, অনলাইন পোর্টাল ও ভিজিটিং কনভেনশনাল ক্যাম্পেইন চালিয়ে বেশি মানুষকে ভোটারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চলছে।
জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্যের সঙ্গে সমন্বয় করে বার্ষিক হালনাগাদ, ডেডিকেটেড অভিযানের মাধ্যমে মিসিং ভোটার শনাক্তকরণ, মৃত্যুবরণ করা ভোটার বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া ইসি গত কয়েকবার সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে।
এবারের খসড়া তালিকাও দেশের সর্বশেষ আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে, যাতে ভ্রান্তি ও অনিয়মের সুযোগ শূন্য করা যায়।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিচ্ছেন, “১২ দিনের মধ্যে সংশোধন ও আপত্তি জানানো অনেক সময় সীমিত। অনেক ভোটার, বিশেষ করে দূরবর্তী ও অনগ্রসর এলাকার মানুষ যথেষ্ট তথ্য না পেয়ে বা প্রবেশাধিকার না থাকার কারণে সময়মতো আবেদন করতে পারেন না।”
তারা আরও বলেন, “অধিকাংশ সময় আবেদন প্রক্রিয়া জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী হয়, যা অনেকের জন্য বিভ্রান্তির কারণ হতে পারে। তাই ইসিকে উচিত আরো সহজ, দ্রুত ও জনগণ-কেন্দ্রিক ব্যবস্থা নেয়া।”
৩১ আগস্টের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা দেশের আগামী নির্বাচন পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এর মাধ্যমে নিশ্চিত হবে কেবল যোগ্য ও সঠিক তথ্যযুক্ত ভোটাররাই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।
এতে রাজনৈতিক দলের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া সহজ হবে এবং নির্বাচন কমিশনকে যথাযথ নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা করবে।
দেশের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী ও বিকেন্দ্রীকৃত করার জন্য ভোটার তালিকার এই হালনাগাদ ও সংশোধন কার্যক্রম অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
এবারের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক সামনে এসেছে। নতুন ৪৪ লাখ ভোটার যুক্ত হওয়া, তথ্য যাচাই ও সংশোধনের সুযোগ, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সময়ানুবর্তিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে ইসি নির্বাচনের প্রস্তুতি গতিশীল করেছে।
যদিও কিছু চ্যালেঞ্জ ও দুর্বলতাও রয়েছে, তবে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য ভোটার তালিকা তৈরি করে দেশের গণতন্ত্রকে আরো সুদৃঢ় করার জন্য এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ