
ছবি: সংগৃহীত
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন রাখতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) বিশেষ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেছে। রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম) কমপ্লেক্সে গত সপ্তাহ থেকে এই প্রশিক্ষণ শুরু হয়, যা জাতিসংঘের মানদণ্ড অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। নির্বাচনের সময় পুলিশের ভূমিকা, দায়িত্ব এবং আচরণবিধি সম্পর্কে স্পষ্ট ও কার্যকর ধারণা দিতে এই প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হয়েছে। সূত্র জানায়, সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যে পুলিশ নির্বাচনি সরঞ্জামাদি ক্রয় করবে, আর চলতি মাসের মধ্যেই সারাদেশে পুলিশের জন্য প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হবে।
প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের সমন্বয় করছেন ডিএমপির দুই যুগ্ম কমিশনার—মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও আবুল কালাম আযাদ। তারা এর আগে পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত ছিলেন। শুধুমাত্র এই প্রশিক্ষণের স্বার্থে গত ২৭ জুলাই তাদের ৩ মাসের জন্য ডিএমপিতে বদলি করা হয়। তারা মূলত আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় শক্তি প্রয়োগের কৌশল এবং এর সীমা সম্পর্কে পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, যাতে নির্বাচনের সময় অযথা বলপ্রয়োগ বা আইনের বাইরে গিয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হয়।
বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আমরা ইতোমধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। চলতি মাসেই সারাদেশে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে এবং ১৫ নভেম্বরের মধ্যেই তা শেষ হবে। প্রায় দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে এই প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে।” তিনি জানান, এ মাসেই দেশের সব জেলা থেকে নির্বাচনি সরঞ্জামাদির তালিকা চাওয়া হবে। বিদ্যমান সরঞ্জামের সঙ্গে মিলিয়ে যেগুলো ঘাটতি রয়েছে, তা সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যেই ক্রয় করা হবে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব) নির্বাচনে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, “এ বিষয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি।” অন্যদিকে, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যে বক্তব্য দিয়েছেন—নির্বাচনের আগে লটারির মাধ্যমে পুলিশ সুপার (এসপি) ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বদলি করা হবে—সে বিষয়ে আইজিপি বলেন, “এটি রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের বিষয়। রাষ্ট্র কোনো সিদ্ধান্ত দিলে সেখানে দ্বিমতের সুযোগ নেই।” প্রিসাইডিং অফিসারদের জন্য গানম্যান নিয়োগের প্রসঙ্গে তিনি জানান, “আমাদের কাছে পর্যাপ্ত জনবল নেই, তাই গানম্যান দেওয়া সম্ভব নয়।”
প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত এক উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা জানান, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার মূল দায়িত্ব পুলিশের ওপরই থাকবে। তাই পুলিশ সদস্যরা যাতে সুন্দরভাবে, আইনসম্মতভাবে ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন, সেজন্যই এই প্রশিক্ষণ। অস্ত্র ব্যবহারের পাঁচটি ধাপ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া হচ্ছে, যাতে দায়িত্ব পালনকালে কেউ এখতিয়ারবহির্ভূত পদক্ষেপ না নেয়। তিনি বলেন, “যারা বর্তমানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, তারা পরবর্তীতে জেলা পর্যায়ে গিয়ে প্রশিক্ষকের ভূমিকা পালন করবেন, যাতে সারাদেশে একই মানদণ্ডে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়।”
পুলিশ স্টাফ কলেজের একজন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি কর্মশালা শেষ করেছি। এসব কর্মশালায় হয়রানিমুক্তভাবে জনগণকে সেবা দেওয়ার পদ্ধতি শেখানো হয়েছে। জনগণের কাছে সহজে সেবা পৌঁছে দিতে কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে হয়, তা রপ্ত করানো হয়েছে। একইসঙ্গে, পুলিশ সদস্যরা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে যেসব সীমাবদ্ধতার সম্মুখীন হন, সেগুলোও আলোচনায় এসেছে।” তিনি আরও জানান, নির্বাচনি দায়িত্ব পালনের কর্মপন্থা নির্ধারণসংক্রান্ত তিনটি কর্মশালাও শেষ হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের একজন অতিরিক্ত ডিআইজি জানান, নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশের প্রস্তুতি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। “গত সপ্তাহ থেকেই আমাদের ব্যস্ততা বেড়েছে। কোন বাহিনীকে কীভাবে, কখন প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, সেসব বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতি ক্লাসে ৪০ জন করে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী তিন মাস এই নির্বাচনি প্রশিক্ষণ চলবে।”
সার্বিকভাবে দেখা যাচ্ছে, নির্বাচনকালীন সময়ে পুলিশের সঠিক ভূমিকা নিশ্চিত করতে এবং সম্ভাব্য সব ধরনের অনিয়ম প্রতিরোধে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং একটি নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের প্রতিটি ধাপে স্বচ্ছতা ও পেশাদারিত্বকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ