
ছবি: সংগৃহীত
শেষ পর্যন্ত বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা দিতে পারছেন না রাজধানীর সরকারি বাঙলা কলেজ কেন্দ্রের আলোচিত এইচএসসি পরীক্ষার্থী আনিসা আহমেদ। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একটি সূত্র বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে। এর মাধ্যমে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে শিক্ষাঙ্গন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত ঘটনাটির পরিসমাপ্তি ঘটতে চলেছে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন, ২৬ জুন। সেদিন নির্ধারিত সময় সকাল ১০টায় পরীক্ষার পরিবর্তে আনিসা পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছান প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে। ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী আনিসা সেদিন বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে পারেননি।
পরীক্ষা দিতে না পারার পর কেন্দ্রের বাইরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। ওই মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পোস্টগুলোর সঙ্গে যুক্ত করা হয় দাবি যে, আনিসার মা সেদিন সকালে ‘মেজর স্ট্রোক’ করায় তিনি মাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন, আর সেই কারণেই পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছাতে দেরি হয়। এছাড়া বলা হয়, তার বাবা মারা গেছেন এবং পরিবারে দায়িত্ব নেওয়ার মতো আর কেউ নেই।
এই ঘটনার পর ফেসবুক, টুইটার (এক্স) ও ইউটিউবে অসংখ্য মানুষ আনিসার প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে পোস্ট করতে থাকেন। অনেকেই পরীক্ষা নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান। শিক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরারও গণমাধ্যমে বলেন, বিশেষ ব্যবস্থায় আনিসাকে পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া হবে। এই বক্তব্যে জনমনে আশার সঞ্চার হয়।
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের যৌথ তদন্তে উঠে আসে ভিন্ন তথ্য। সরকারি সূত্রে জানা যায়, আনিসার মায়ের স্ট্রোক করার দাবিটি সঠিক নয়। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনা যেভাবে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার হয়েছে, তা বাস্তবের সঙ্গে মেলে না। ফলে সরকারি পর্যায়ে তার জন্য পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, “আনিসার বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষার বিষয়ে কোনো বিশেষ সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে যে বিষয়টির পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি, যদি সেখানে ৬৬ নম্বর পাওয়া যায়, তাহলে সে পাস করতে পারবে।” অর্থাৎ, অন্য বিষয়ে ভালো ফল করলে পাসের সুযোগ এখনো আছে।
এই ঘটনায় জনমত দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একদল মনে করেন, ব্যক্তিগত কারণ যাই হোক না কেন, এত গুরুত্বপূর্ণ একটি পরীক্ষা মিস করলে সুযোগ দেওয়াই উচিত ছিল। অন্যদিকে অনেকে বলেন, পরীক্ষার নিয়ম ভেঙে এক জনকে সুযোগ দিলে ন্যায্যতা বিঘ্নিত হবে এবং ভবিষ্যতে অন্য শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম তৈরি হবে।
বাংলাদেশে এইচএসসি পরীক্ষা দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষা। নির্ধারিত সময়ের পরে পরীক্ষার্থীকে প্রবেশ করতে না দেওয়ার নিয়ম কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়। শিক্ষা বোর্ডের নীতিমালা অনুযায়ী, প্রশ্নপত্র বিতরণের নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলে কোনো পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় না। এর উদ্দেশ্য হলো প্রশ্নপত্র ফাঁস বা পরীক্ষার সুষ্ঠুতা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা কমানো।
যদিও শুরুতে ব্যাপক সহানুভূতি ও পুনঃপরীক্ষার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত আনিসা আহমেদের ক্ষেত্রে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি। তবে অন্যান্য বিষয়ে ভালো ফল করলে তিনি পাসের সুযোগ পাবেন। এই ঘটনাটি একদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত জনমত তৈরির একটি উদাহরণ হয়ে উঠেছে, অন্যদিকে সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণে নিয়ম ও নীতিমালার গুরুত্বও তুলে ধরেছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ