
ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রাম বন্দরে ব্রাজিলের মানাউস থেকে আমদানিকৃত স্ক্র্যাপ লোহা বোঝাই একটি কনটেইনারে তেজস্ক্রিয়তার উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বন্দরের প্রবেশপথে স্থাপিত উন্নতমানের ‘মেগাপোর্ট ইনিশিয়েটিভ রেডিয়েশন ডিটেকটিভ সিস্টেম’—যা আমদানিকৃত পণ্যে কোনো প্রকার তেজস্ক্রিয় উপাদান শনাক্তে সক্ষম—এর মাধ্যমে কনটেইনারটি স্ক্যান করার সময় এ সংকেত ধরা পড়ে।
এ ঘটনায় চট্টগ্রাম কাস্টমস তাৎক্ষণিকভাবে কনটেইনারটির খালাস প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছে এবং নিরাপত্তার স্বার্থে সেটিকে বন্দরের নির্দিষ্ট একটি আলাদা স্থানে সরিয়ে রাখা হয়েছে।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, স্ক্র্যাপ লোহার এই কনটেইনারটি ব্রাজিলের মানাউস বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে। পথে এটি পানামা, নেদারল্যান্ডস ও শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন বন্দরে নোঙর করে। শেষ পর্যন্ত ‘এমভি মাউন্ট ক্যামেরন’ নামের পণ্যবাহী জাহাজে করে কনটেইনারটি গত ৩ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায় এবং বন্দরের জিসিবি ৭ নম্বর জেটিতে নামানো হয়।
এ চালানটি ঢাকার ডেমরায় অবস্থিত আল আকসা স্টিল লিমিটেড নামের একটি লোহা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আমদানি করেছে। প্রতিষ্ঠানটি মোট পাঁচটি কনটেইনারে স্ক্র্যাপ লোহা আমদানি করলেও এর মধ্যে একটিতেই তেজস্ক্রিয়তার সংকেত পাওয়া গেছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ মারুফুর রহমান জানান, কনটেইনারটি বন্দরের নিয়মিত নিরাপত্তা ও তেজস্ক্রিয়তা শনাক্তকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে স্ক্যান করা হয়। স্ক্যানের সময় রেডিয়েশন ডিটেকটিভ সিস্টেমে এলার্ম বাজতে শুরু করলে তাৎক্ষণিকভাবে কনটেইনারটির ডেলিভারি বন্ধ রাখা হয়।
তিনি বলেন, “প্রাথমিকভাবে তেজস্ক্রিয় উপাদানের উপস্থিতি ধরা পড়েছে। এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত সংবেদনশীল হওয়ায় আমরা কনটেইনারটি আলাদা স্থানে সরিয়ে রেখেছি। পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য পরমাণু শক্তি কমিশনকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করা হয়েছে।”
পরমাণু শক্তি কমিশনের কর্মকর্তারা চট্টগ্রাম বন্দরে এসে বিশেষায়িত যন্ত্রপাতির মাধ্যমে কনটেইনারের ভেতরে থাকা পণ্যের তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা নিরূপণ করবেন। তাদের পরীক্ষার পরই পরবর্তী পদক্ষেপ—যেমন কনটেইনার খালাস, পণ্য ধ্বংস বা ফেরত পাঠানো—সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, “বন্দর এলাকায় স্থাপন করা উন্নত রেডিয়েশন সেন্সরে সংকেত পাওয়ার পর কনটেইনারটি খালাস বন্ধ রাখা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এ ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে প্রথমেই কনটেইনারকে আলাদা রাখা হয়, যাতে অন্য কোনো পণ্য বা ব্যক্তি এর প্রভাবের শিকার না হন।”
তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়, তাই নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে প্রতিটি কনটেইনারকেই রেডিয়েশন সেন্সরের মাধ্যমে স্ক্যান করা হয়।
যদিও এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি, তবে কাস্টমস কর্মকর্তাদের প্রাথমিক ধারণা, স্ক্র্যাপ লোহা সংগ্রহ বা রিসাইক্লিংয়ের সময় তেজস্ক্রিয় উপাদান মিশে যেতে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপ লোহা আমদানিতে এ ধরনের ঝুঁকি আগেও দেখা গেছে।
কাস্টমস, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও পরমাণু শক্তি কমিশনের যৌথ তদন্তে তেজস্ক্রিয়তার উৎস, মাত্রা এবং সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি নিরূপণ করা হবে। একইসঙ্গে এই চালানের পুরো প্রক্রিয়া—ব্রাজিল থেকে লোডিং, মধ্যবর্তী বন্দরগুলোতে অবস্থান এবং বাংলাদেশে আগমনের পরবর্তী ধাপ—পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখা হবে।
এ মুহূর্তে কনটেইনারটি নিরাপত্তা ঘেরা এলাকায় রয়েছে এবং অনুমোদিত কর্মকর্তারা ছাড়া কেউ এর কাছাকাছি যেতে পারছেন না।
বাংলাবার্তা/এমএইচ