
ছবি: সংগৃহীত
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ‘জিরো ট্যাক্স রিটার্ন’ সংক্রান্ত বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কতা জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সংস্থাটি স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, আয়কর আইন, ২০২৩ অনুযায়ী ‘জিরো রিটার্ন’ নামে কোনো ধরনের রিটার্ন দাখিলের বিধান নেই, এবং এমন প্রক্রিয়ায় রিটার্ন দাখিল করা সম্পূর্ণ বেআইনি। এমনকি এ ধরনের মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর রিটার্ন দাখিল করলে করদাতাকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে হতে পারে।
রোববার (১০ আগস্ট) এনবিআর থেকে পাঠানো এক সরকারি সংবাদ বিবৃতিতে জানানো হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, করদাতারা তাদের রিটার্ন ফরমের সব ঘরে ‘শূন্য’ লিখে বা তথ্য ফাঁকা রেখে রিটার্ন দাখিল করতে পারেন। এসব পোস্টে ‘জিরো রিটার্ন’ বা ‘শূন্য রিটার্ন’ দাখিলকে বৈধ হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণভাবে ভুল, বিভ্রান্তিকর এবং আইনবিরোধী।
এনবিআরের বিবৃতিতে বলা হয়, আয়কর আইন, ২০২৩ অনুসারে প্রত্যেক করদাতাকে তাদের প্রকৃত আয়, ব্যয়, সম্পদ এবং দায়ের তথ্য সঠিকভাবে রিটার্নে প্রদর্শন করতে হবে। করদাতা যদি এই তথ্যগুলোর কোনোটি ‘শূন্য’ হিসেবে দেখান, অথচ বাস্তবে তার ভিন্ন তথ্য থাকে, তাহলে সেটি অসত্য ঘোষণা হিসেবে গণ্য হবে। এই ধরনের অসত্য বা মিথ্যা তথ্য প্রদান করা একটি ফৌজদারি অপরাধ।
আইনটির ধারা ৩১২ এবং ৩১৩ অনুযায়ী, করদাতা যদি রিটার্নে মিথ্যা তথ্য প্রদান করেন বা প্রকৃত তথ্য গোপন করেন, তাহলে তাকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড দেওয়া হতে পারে। অর্থাৎ, কর প্রদেয় না হলেও যদি প্রকৃত তথ্য গোপন করে ‘জিরো রিটার্ন’ দাখিল করা হয়, তবে সেটি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা আল আমিন গণমাধ্যমকে বলেন, “একজন করদাতার আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায় সম্পর্কে সঠিক ঘোষণা দেওয়া তার পবিত্র নাগরিক দায়িত্ব এবং আইনগত বাধ্যবাধকতা। করযোগ্য আয় না থাকলে করদাতাকে কোনো কর দিতে হবে না, কিন্তু সঠিক তথ্য প্রকাশ করতেই হবে। করযোগ্য আয় না থাকা মানে এই নয় যে সব তথ্য শূন্য দেখিয়ে রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে।”
তিনি আরও জানান, কর প্রদানের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও সঠিক তথ্য গোপন করে ‘জিরো রিটার্ন’ দাখিল করা আইনত অপরাধ। তাই কোনো করদাতাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত প্রতারণামূলক পরামর্শ বা ভ্রান্ত ধারণার ফাঁদে পা দেবেন না।
সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামসহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ‘জিরো ট্যাক্স রিটার্ন’ বিষয়ে বিভ্রান্তিকর ভিডিও ও পোস্ট শেয়ার করা হচ্ছে। এসব পোস্টে বলা হচ্ছে, আয়, ব্যয়, সম্পদ ও দায়ের ঘরগুলোতে শূন্য লিখে সহজে রিটার্ন দাখিল করা যায় এবং তাতে কোনো সমস্যা নেই। এনবিআরের মতে, এই ধরনের পোস্টের মূল উদ্দেশ্য করদাতাদের ভুল পথে পরিচালিত করা, যা অনেককে অনিচ্ছাকৃতভাবে আইনি ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।
এনবিআর করদাতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেন নিজ নিজ রিটার্ন ফরমে প্রকৃত তথ্য সঠিকভাবে প্রদর্শন করেন এবং কোনো প্রকার অসত্য তথ্য না দেন। প্রকৃত আয়ের পরিমাণ করযোগ্য সীমার নিচে থাকলেও সঠিক তথ্য প্রদর্শন করলেই করদাতা আইনগতভাবে নিরাপদ থাকবেন। করদাতারা চাইলে নিবন্ধিত ট্যাক্স আইনজীবী (আইটিপি) বা এনবিআরের হেল্পডেস্ক থেকে সহায়তা নিতে পারেন।
এনবিআরের বিবৃতিতে বলা হয়, দেশের অবকাঠামো, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও উন্নয়ন প্রকল্পে করের টাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই করদাতারা যদি সঠিকভাবে রিটার্ন জমা দেন এবং তাদের প্রকৃত আয় ও সম্পদের তথ্য প্রকাশ করেন, তবে তারা শুধু আইন মেনে চলবেন না, বরং দেশের উন্নয়নে গর্বিত অংশীদারও হবেন।
এনবিআর আশা করছে, দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে করদাতারা সত্য তথ্য দিয়ে রিটার্ন দাখিল করবেন, আইন ভঙ্গের ঝুঁকি এড়িয়ে চলবেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত ভ্রান্ত ধারণায় প্রভাবিত হবেন না।
বাংলাবার্তা/এসজে