
ছবি: সংগৃহীত
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ অক্ষুণ্ণ থাকে, সেজন্য র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। র্যাব মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত আইজিপি একেএম শহিদুর রহমান জানিয়েছেন, উৎসবকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। তবে এসব অপচেষ্টা ঠেকাতে র্যাবসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে এবং প্রতিটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম নিবিড়ভাবে মনিটর করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রংপুর নগরীর তালতলা রোডে অবস্থিত কালিমন্দিরের পূজামণ্ডপ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঘুরে দেখেন এবং স্থানীয় প্রশাসন ও পূজা উদযাপন কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, “আমাদের কাছে খবর আছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে একটি মহল গুজব ছড়ানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কেউ যদি দুর্গাপূজা নিয়ে কোনো তথ্য পান, তবে সেটি যাচাই না করে কখনোই শেয়ার করবেন না। বরং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানান, আমরা দ্রুত সেটি যাচাই করে দেখব। যদি তথ্যটি সত্য হয় তবে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। আর যদি কেউ উদ্দেশ্যমূলকভাবে গুজব ছড়ায়, তবে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না, তার বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, “দেশে কিছু অসুস্থ মানসিকতার মানুষ আছে, যারা ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে বিভ্রান্তি ছড়াতে চায় এবং পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে। কিন্তু আমরা যদি সবাই মিলে সতর্ক থাকি, তবে এ ধরনের কোনো অপতৎপরতা সফল হবে না। র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মাঠে আছে। পূজামণ্ডপে সিসি ক্যামেরা, পাহারার ব্যবস্থা ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতেও বিজিবি মোতায়েন রয়েছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ মণ্ডপগুলোতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
শহিদুর রহমান আরও জানান, দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে ঐতিহ্য রয়েছে তা বজায় রাখতে র্যাব কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের প্রতিটি ধর্মের মানুষ মিলেমিশে একসঙ্গে উৎসব উদযাপন করে আসছে। দুর্গোৎসব শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নয়, বরং দেশের সব মানুষই এটি উপভোগ করে। ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ৮ থেকে ১০টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।”
এ বছর সারাদেশে মোট ৩১ হাজার ৫৪৬টি দুর্গাপূজার মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান র্যাব মহাপরিচালক। প্রতিটি মণ্ডপে পুলিশ, র্যাব, আনসারসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন থাকবে। পাশাপাশি প্রতিটি পূজা উদযাপন কমিটিকে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, “আমাদের সবার দায়িত্ব হলো উৎসবকে শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন করা। তাই পূজার সময় যারা গুজব রটাবে, বিভ্রান্তি ছড়াবে বা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে চাইবে, তাদের আমরা আইনের আওতায় আনব। সবাইকে অনুরোধ করছি, যেকোনো সন্দেহজনক তথ্য বা আচরণ সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জানান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জনগণের সঙ্গে নিয়ে কাজ করছে। সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার সুযোগ থাকবে না।”
এ সময় র্যাব-১৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনজুর করিম প্রদীপ, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মজিদ আলী, পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সারসংক্ষেপে বলা যায়, আসন্ন দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে যেন কোনো গুজব বা ষড়যন্ত্র সফল না হয়, সে জন্য র্যাব সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছে। দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ রাখতে এবং পূজাকে আনন্দমুখর করতে সরকারের সব বাহিনী একযোগে কাজ করছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ