
ছবি: সংগৃহীত
২০২৬ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার জন্য বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এবার বাংলা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) এবং ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ে নতুন প্রশ্ন কাঠামো ও নম্বর বিভাজন কার্যকর হবে। এর ফলে আগামী প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার ধরন ও প্রস্তুতিতে আসবে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) এনসিটিবির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রবিউল কবির চৌধুরীর স্বাক্ষরিত এক সরকারি চিঠিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। চিঠিটি আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যানকে পাঠানো হয়েছে, যাতে সংশ্লিষ্ট সব শিক্ষা বোর্ডে নির্দেশনা কার্যকর হয়।
বাংলা দ্বিতীয়পত্রে দীর্ঘদিন ধরে যে রচনামূলক অংশে অনুবাদ প্রশ্ন ছিল, সেটি এখন থেকে বাদ দেওয়া হলো। অনুবাদের জন্য পূর্বে যে ১০ নম্বর বরাদ্দ ছিল, সেটি আর থাকছে না। পরিবর্তে ওই ১০ নম্বর এবার সংবাদ প্রতিবেদন লেখার অংশে যুক্ত হবে।
শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পরিবর্তন শিক্ষার্থীদের বাস্তবমুখী লেখালেখির দক্ষতা বাড়াবে। কারণ সংবাদ প্রতিবেদন লেখা শুধু পরীক্ষার অংশ নয়, বরং এটি শিক্ষার্থীদের বিশ্লেষণ ক্ষমতা, ভাষার দক্ষতা ও বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরার সক্ষমতা তৈরি করবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে এ বছর থেকে সংক্ষিপ্ত-উত্তর প্রশ্ন আর থাকছে না। আগে যেখানে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নে ১০ নম্বর থাকত, এবার সেটি বহুনির্বাচনী অংশে যোগ করা হয়েছে। ফলে আইসিটি বিষয়ে বহুনির্বাচনী প্রশ্নের মোট নম্বর দাঁড়াল ২৫।
এনসিটিবির কর্মকর্তারা বলছেন, প্রযুক্তি বিষয়ক শিক্ষার মূল লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের ধারণাগত জ্ঞান যাচাই করা। বহুনির্বাচনী প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অনেক দ্রুত ও নির্ভুলভাবে তাদের জ্ঞান প্রমাণ করতে পারবে।
ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ে কাঠামোতে এসেছে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। এবার থেকে ফিন্যান্স অংশ থেকে ৮টি এবং ব্যাংকিং অংশ থেকে ৭টি মিলিয়ে মোট ১৫টি সংক্ষিপ্ত-উত্তর প্রশ্ন থাকবে। শিক্ষার্থীদের সেখান থেকে যেকোনো ১০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। তবে শর্ত হলো—যে কোনো একটি বিভাগ (ফিন্যান্স অথবা ব্যাংকিং) থেকে ন্যূনতম ৪টি প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই দিতে হবে।
এ পরিবর্তন শিক্ষার্থীদের উভয় অংশের ওপর সমান গুরুত্ব দিতে উৎসাহিত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পূর্বে অনেকেই কেবল একটি অংশের ওপর বেশি নির্ভর করতেন।
পরিবর্তনের খবরে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। রাজধানীর কয়েকজন পরীক্ষার্থী জানায়, সংবাদ প্রতিবেদন যুক্ত হওয়ায় বাংলা দ্বিতীয়পত্রের প্রস্তুতি নিতে হবে নতুনভাবে। অন্যদিকে, আইসিটিতে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন বাদ দেওয়ায় অনেকেই স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
শিক্ষক সমাজও বিষয়টিকে সময়োপযোগী পরিবর্তন হিসেবে দেখছেন। তাঁদের মতে, বর্তমান যুগে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা যাচাই করতে হলে পরীক্ষায় আধুনিক কাঠামো প্রয়োজন।
শিক্ষা বোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব পরিবর্তনের মাধ্যমে পরীক্ষার কাঠামোকে আরও বাস্তবমুখী ও প্রয়োজনমাফিক করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের শুধু মুখস্থ বিদ্যার ওপর নির্ভর না করে বিশ্লেষণী দক্ষতা ও ব্যবহারিক জ্ঞানের ওপর জোর দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, এসএসসি পরীক্ষা বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। প্রতি বছর লাখো শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাই প্রশ্ন কাঠামো ও নম্বর বিভাজনে সামান্য পরিবর্তনও ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।
সংক্ষেপে পরিবর্তনগুলো:
-
বাংলা দ্বিতীয়পত্র: অনুবাদ প্রশ্ন বাদ, বরাদ্দ ১০ নম্বর এখন সংবাদ প্রতিবেদনের জন্য।
-
আইসিটি: সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন বাদ, বহুনির্বাচনীতে মোট ২৫ নম্বর।
-
ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং: মোট ১৫টি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন থাকবে, উত্তর দিতে হবে ১০টি (প্রতিটি অংশ থেকে ন্যূনতম ৪টি)।
বাংলাবার্তা/এমএইচ