
ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কার্যক্রমকে আরও গতিশীল ও আমদানি প্রক্রিয়াকে সহজতর করতে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন নীতিমালা ঘোষণা করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন থেকে আমদানিকারকরা ২০ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত অগ্রিম অর্থ পরিশোধ করতে পারবেন, যেখানে আগে সীমা ছিল মাত্র ১০ হাজার ডলার। এ অর্থ পাঠাতে কোনো ধরনের রিপেমেন্ট গ্যারান্টির প্রয়োজন হবে না। পাশাপাশি রপ্তানিকারকদের রিটেনশন কোটা হিসাব থেকে অগ্রিম অর্থ পাঠানোর সীমাও ২৫ হাজার ডলার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, এ পদক্ষেপ মূলত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সহজীকরণ প্রক্রিয়ার অংশ এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নীতিগত নমনীয়তা প্রদানের ধারাবাহিকতা। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়ী মহল বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের আমদানিকারকরা অগ্রিম অর্থ পাঠানোর সীমা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাদের অভিযোগ ছিল, সীমা কম থাকার কারণে ছোট আকারের কাঁচামাল, যন্ত্রাংশ বা জরুরি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে অগ্রিম অর্থ পাঠাতে জটিলতার মুখে পড়তে হতো। অনেক সময় লেনদেন বিলম্বিত হওয়ার কারণে অর্ডার বাতিল হয়ে যেত বা ব্যবসায়িক ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি হতো।
নতুন এ সিদ্ধান্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ স্বস্তি বয়ে আনবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়িক সংগঠনের নেতারা। কারণ অগ্রিম অর্থ পাঠানোর সীমা দ্বিগুণ হওয়ায় তারা সহজেই আন্তর্জাতিক সরবরাহকারীদের সঙ্গে দ্রুত চুক্তি করতে পারবেন এবং পণ্য আমদানিতে সময় বাঁচবে। বিশেষ করে টেক্সটাইল, পোশাক, ফার্মাসিউটিক্যালস, ইলেকট্রনিকস এবং খাদ্যপণ্য আমদানিকারকরা এর সরাসরি সুবিধা পাবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, এর ফলে ব্যবসায়ীদের আর অতিরিক্ত খরচ করে ব্যাংক গ্যারান্টি নিতে হবে না। ছোট অংকের লেনদেনও এখন সহজেই সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। ফলে সামগ্রিকভাবে লেনদেনের গতি বাড়বে এবং আমদানি কার্যক্রম আরও কার্যকর হবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান বৈশ্বিক বাণিজ্যে প্রতিযোগিতা দিন দিন বাড়ছে। এ অবস্থায় সময় ও খরচ বাঁচাতে প্রযুক্তি নির্ভর কার্যক্রম যেমন দরকার, তেমনি নীতিগত নমনীয়তাও অপরিহার্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত মূলত সেই প্রেক্ষাপটেই এসেছে। এটি দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যকে আরও সহজ করবে এবং আমদানিকারকদের ব্যবসায়িক আস্থা বাড়াবে।
একজন বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেন, “বিশ্ববাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে আমাদের ব্যবসায়ীদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আগে সীমা কম থাকার কারণে অনেক সময় ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়তেন। এখন সীমা বাড়ায় ব্যবসায়ীরা স্বল্প সময়ে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কাঁচামাল ও প্রয়োজনীয় পণ্য সংগ্রহ করতে পারবেন।”
এ নীতিগত সংশোধনের মাধ্যমে শুধু আমদানিকারকরাই নয়, রপ্তানিকারকরাও সুবিধা পাবেন। আগে রপ্তানিকারকরা রিটেনশন কোটা হিসাব থেকে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার ডলার পর্যন্ত অগ্রিম অর্থ পাঠাতে পারতেন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন তারা ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত পাঠাতে পারবেন। এর ফলে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোও বৈদেশিক বাণিজ্যে সহজে লেনদেন করতে পারবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়াতে সক্ষম হবে।
ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, অগ্রিম অর্থ পাঠানোর এ সীমা বৃদ্ধি হলে সামগ্রিকভাবে আমদানি প্রক্রিয়া আরও তরান্বিত হবে, বৈদেশিক বাণিজ্যের খরচ কমবে এবং দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গতি আসবে। একদিকে যেমন ব্যবসায়ীরা আস্থা ফিরে পাবেন, অন্যদিকে সরকারের রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণেও এটি সহায়ক হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন, বিশ্ববাজারে যেভাবে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন আসছে, সেভাবেই তারা ধাপে ধাপে ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে নীতিমালা সংশোধন করে যাচ্ছে। সামনের দিনে আরও কিছু নীতিগত সংস্কারের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করার পরিকল্পনা রয়েছে।
সারসংক্ষেপে বলা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই নতুন সিদ্ধান্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য একটি বড় স্বস্তির পদক্ষেপ। আমদানি প্রক্রিয়ার জটিলতা কমবে, সময় ও খরচ সাশ্রয় হবে এবং দেশের সামগ্রিক বাণিজ্য কার্যক্রম আরও সহজ হবে।
বাংলাবার্তা/এসজে