
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) তাদের কাঙ্ক্ষিত দলীয় প্রতীক ‘শাপলা’ ব্যবহার করতে পারবে না বলে নিশ্চিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ বিষয়ে স্পষ্ট করে জানিয়েছেন ইসি’র সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। তিনি বলেছেন, আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রতীকের ভেটিং হয়ে এসেছে এবং সেখানে শাপলা প্রতীকটি অন্তর্ভুক্ত নেই। ফলে এনসিপিকে বিকল্প প্রতীক বেছে নিতে হবে।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সচিব এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, প্রতীকের বিষয়ে চূড়ান্ত তালিকা আইন মন্ত্রণালয় থেকে আসার পরই বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে। শাপলা প্রতীকটি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না থাকায় এটি কোনো রাজনৈতিক দলকে দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে যারা এই প্রতীক আশা করেছিল, তাদের বিকল্প প্রতীক থেকে বেছে নিতে হবে।
এর আগে, চলতি বছরের জুলাই মাসে নির্বাচন কমিশন নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, শাপলাকে নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। সে সময় ইসি জানিয়েছিল, শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল এবং জাতীয় প্রতীক ও পতাকার মতোই এর বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। যদিও জাতীয় ফুল বা ফল ব্যবহারের ওপর সরাসরি কোনো আইন নেই, তবে এর মর্যাদার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে এটি রাজনৈতিক প্রতীক হিসেবে ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ গত ৯ জুলাই বলেন, অতীতে একাধিক রাজনৈতিক দল শাপলাকে প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করার প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু জাতীয় মর্যাদা রক্ষার স্বার্থে তখনও প্রতীকটি দেওয়া হয়নি। এবারের ক্ষেত্রেও একই নীতি অনুসরণ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, জাতীয় প্রতীক ও পতাকার ক্ষেত্রে আইন থাকলেও জাতীয় ফুল বা ফল ব্যবহারের ক্ষেত্রে আইনগত বাধ্যবাধকতা না থাকায় বিষয়টি কমিশনের নীতিগত সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে।
উল্লেখ্য, গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের উদ্যোগে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এ বছর নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করে। আবেদনে তারা প্রধান প্রতীক হিসেবে শাপলা চায়। তবে বিকল্প তালিকায় তাদের পছন্দের প্রতীক ছিল ‘কলম’ ও ‘মোবাইল ফোন’। এখন শাপলা প্রতীক বাতিল হওয়ায় ওই বিকল্প প্রতীকগুলোর মধ্যে একটি বা নতুন কোনো প্রতীক বেছে নিতে হবে এনসিপিকে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এনসিপির মতো নতুন দলের জন্য প্রতীক নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রতীকই ভোটারদের কাছে দলের পরিচিতি তৈরি করে দেয়। বিশেষ করে গ্রামের ভোটাররা প্রার্থীর নামের চেয়ে প্রতীককে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। তাই দলটি শাপলা না পেয়ে এখন কী বিকল্প প্রতীক নেয় এবং সেটি কতটা কার্যকর হয়—তা তাদের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক যাত্রার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে।
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে অনেকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের মতে, জাতীয় ফুল শাপলা দেশের পরিচয় বহন করে। এটি রাজনৈতিক প্রতীক হিসেবে ব্যবহার হলে জাতীয় মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তাই কমিশন সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, যদি আইনেই কোনো বাধা না থাকে, তাহলে শুধুমাত্র নীতিগত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে জনপ্রিয় জাতীয় প্রতীককে বাদ দেওয়া কতটা যৌক্তিক।
সব মিলিয়ে শাপলা প্রতীক নিয়ে দীর্ঘ বিতর্কের অবসান ঘটাল ইসি। এখন জাতীয় নাগরিক পার্টিকে নতুন করে ভাবতে হবে কোন প্রতীকের মাধ্যমে তারা জনগণের কাছে নিজেদের বার্তা পৌঁছে দেবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ