
ছবি: সংগৃহীত
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী গুঞ্জন, জল্পনা ও বিতর্কের মধ্যে বিএনপি তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিএনপি এখন পর্যন্ত কাউকেই মনোনয়ন কিংবা সবুজ সংকেত দেয়নি। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের নামে তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মনগড়া এবং দলের ভেতরে বিভ্রান্তি ও অসন্তোষ সৃষ্টি করার অপচেষ্টা।
রিজভী অভিযোগ করেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে কিছু মহল মিথ্যা সংবাদ ও মনগড়া তালিকা প্রচার করছে, যেন বিএনপির মধ্যে ভাঙন সৃষ্টি হয় এবং নেতাকর্মীরা বিভ্রান্তিতে পড়ে। তিনি বলেন, “সম্প্রতি কয়েকটি গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় বিএনপির প্রার্থীদের মনোনয়ন সংক্রান্ত কথিত তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এর মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ, বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চলছে। অনুমিত হচ্ছে, বিএনপিতে বিভেদ সৃষ্টির অভিপ্রায় নিয়ে একটি কুচক্রী মহল অপপ্রচারে লিপ্ত।”
তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, বিএনপি সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে। তবে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দলের নিজস্ব প্রক্রিয়া কঠোরভাবে অনুসৃত হবে। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, বিএনপিতে প্রার্থী মনোনয়ন হয় গঠনতান্ত্রিক নিয়মের মাধ্যমে, কোনো প্রকার ‘সবুজ সংকেত’-এর মাধ্যমে নয়। মনোনয়ন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে পার্লামেন্টারি বোর্ডের হাতে থাকে, এবং তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হয়। এ কারণেই তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানান যে, এখন গণমাধ্যম বা অনলাইনে ছড়ানো ভুয়া খবরের প্রতি কান না দিয়ে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। তফসিল ঘোষণার পরই দলের কেন্দ্রীয়ভাবে প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করা হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনার প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, “সবুজ সংকেত নয়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সবার জন্য স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন ঐক্যবদ্ধ থাকতে। তিনি বলেছেন, নেতাকর্মীরা নিজেদের মধ্যে ইস্পাতকঠিন ঐক্য বজায় রাখবেন। গণসম্পৃক্ত প্রতিটি কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবেন। কোনোভাবেই জনগণ বিরক্ত হয়—এমন কাজে কেউ লিপ্ত হবেন না। জনগণের আস্থা অর্জনই আমাদের লক্ষ্য, আর সেখানেই ধানের শীষের বিজয় নিহিত।”
তিনি আরও জানান, তারেক রহমান নেতাকর্মীদের ডোর টু ডোর ক্যাম্পেইন জোরদার করার পরামর্শ দিয়েছেন। আগামী দিনের মুক্তির সনদ হিসেবে বিএনপির ৩১ দফা কর্মসূচি জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে বলেছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে যেন তারা নিজেদের মধ্যে ঐক্য বজায় রাখেন এবং আরও জনবান্ধব কার্যক্রমে যুক্ত হন।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী সমালোচনা করেন সরকার ও তাদের সহযোগীদের। তার দাবি, যখন দেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ তৈরি হচ্ছে, তখনই একটি মহল নানা অপপ্রচার ছড়িয়ে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করছে। তিনি অভিযোগ করেন, “গণহত্যাকারী নিষিদ্ধ সংগঠন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের গোপন মিশনে নেমেছে একটি চক্র। এরা নানা বয়ান তৈরি করছে, ভুয়া খবর ছড়াচ্ছে, উদ্দেশ্য একটাই—জনগণের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা।”
বিএনপি নেতার বক্তব্যে বারবার উঠে আসে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা। তিনি বলেন, কুচক্রী মহল তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়েছে। এজন্য তারা কিছু গণমাধ্যমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে এবং বিএনপির নামে অসত্য সংবাদ পরিবেশন করছে।
সবশেষে রিজভী দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান, “আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না। বিএনপি যখন যেভাবে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটি দলের অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়া ও পার্লামেন্টারি বোর্ডের মাধ্যমে হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত ধৈর্য ধরে থাকুন, ঐক্য বজায় রাখুন এবং জনগণের পাশে থাকুন।”
বাংলাবার্তা/এমএইচ