
ছবি: সংগৃহীত
পশ্চিমা বিশ্বের একের পর এক দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছে। কেউ এটিকে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কূটনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ মনে করছেন, এটি ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টির একটি কৌশল। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিষয়টিকে সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছেন। তার মতে, ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া মানেই আসলে হামাসকে পুরস্কৃত করার সমান।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, সম্প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোর ফিলিস্তিন স্বীকৃতির সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন ট্রাম্প। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, এই পদক্ষেপ কোনোভাবেই সংঘাত বন্ধে সহায়ক হবে না, বরং উল্টো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিটও সাংবাদিকদের কাছে একই বার্তা পৌঁছে দেন।
লেভিট বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ ধরনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে মোটেই একমত নন। তার মতে, বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো গাজায় হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করা। কিন্তু ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া সেই প্রক্রিয়ায় কোনো অবদান রাখছে না। বরং এটি সংঘাতকে আরও জটিল করে তুলছে। লেভিটের ভাষায়, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মনে করেন, এই সিদ্ধান্ত বাস্তব কোনো ফল বয়ে আনবে না। বরং এটি হামাসকে পুরস্কৃত করার মতো।”
তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প মনে করেন মিত্র দেশগুলো যে ধরনের ঘোষণা দিচ্ছে, সেগুলো কেবল প্রতীকী ও কথার ফুলঝুরি ছাড়া আর কিছু নয়। এতে মাঠপর্যায়ে কোনো পরিবর্তন আসছে না। তার মতে, এভাবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া হলে তা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের সমাধান নয়, বরং রাজনৈতিক প্রতীকী পদক্ষেপ মাত্র।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই স্বীকৃতির বিষয়টি ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনের ঠিক আগে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ফ্রান্স। এর মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, কানাডা ও পর্তুগালের পর ফ্রান্সও পশ্চিমা দেশগুলোর তালিকায় যোগ দিল, যারা সম্প্রতি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ফ্রান্সের এ পদক্ষেপ কেবল প্রতীকী নয়, বরং ইসরায়েলের ওপর কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টির একটি অংশ। বিশেষ করে এমন সময়ে এই ঘোষণা এসেছে যখন গাজায় ইসরায়েলের হামলা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত সেখানে ৬৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। পুরো অঞ্চল কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গাজার স্কুল, হাসপাতাল, আশ্রয়কেন্দ্রসহ বেসামরিক অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে পড়েছে। এই ভয়াবহ মানবিক সংকটের মধ্যেই ফ্রান্সের স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক মহলে নতুন আলোচনা তৈরি করেছে।
শুধু তাই নয়, পশ্চিমা দেশগুলোর এই স্বীকৃতি ইসরায়েলকে আরও বিচ্ছিন্ন করার প্রক্রিয়ার অংশ বলেও মনে করছেন কিছু কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞ। তাদের মতে, এর ফলে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়বে এবং গাজায় যুদ্ধবিরতি বা অন্তত সহিংসতা কমানোর দিকে কিছুটা হলেও বাধ্য করা সম্ভব হবে। অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন মনে করছে, এতে বাস্তবে কোনো ইতিবাচক ফল আসবে না। বরং হামাসের অবস্থান শক্তিশালী হবে এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।
এদিকে, মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উপেক্ষা করা হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলোর স্বীকৃতি এ দাবিকে নতুনভাবে বৈধতা দিচ্ছে। তবে এর মধ্যেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই মন্তব্য নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তিনি সরাসরি ফিলিস্তিন স্বীকৃতিকে হামাসের সঙ্গে যুক্ত করে দেখছেন, যা মূল ইস্যুটিকে ভিন্নখাতে নিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সমালোচকরা।
সব মিলিয়ে বলা যায়, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গন দ্বিধাবিভক্ত। একপক্ষ মনে করছে এটি মানবিক সংকট নিরসন ও শান্তির পথে একধাপ এগোনো, অন্যপক্ষ মনে করছে এটি কেবল প্রতীকী এবং হামাসকে পরোক্ষভাবে পুরস্কৃত করার সমান। তবে যে দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখা হোক না কেন, গাজার ধ্বংসস্তূপে বসবাসরত লাখো মানুষের জন্য এই কূটনৈতিক খেলায় এখনো বাস্তব কোনো পরিবর্তন আসছে না।
বাংলাবার্তা/এমএইচ