
ছবি: সংগৃহীত
আফগানিস্তানের বাগরাম বিমানঘাঁটি পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি আফগানিস্তান এই ঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রের হাতে না ফিরিয়ে দেয়, তবে তাদের জন্য “খারাপ কিছু” ঘটতে পারে। তবে কাবুলের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, বাগরামের এক ইঞ্চি জমিও যুক্তরাষ্ট্রকে হস্তান্তর করা হবে না।
ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশাল’-এ লিখেছেন, “যারা বাগরাম ঘাঁটি নির্মাণ করেছে, তাদের যদি ঘাঁটিটি ফিরিয়ে না দেওয়া হয়, খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে।” যদিও তিনি খারাপ কিছু বলতে কী বোঝাচ্ছেন তা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেননি। এর আগে লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, চীনকে মোকাবিলা করার জন্য বাগরাম ঘাঁটির প্রয়োজন। ট্রাম্পের দাবি, চীনের পারমাণবিক অস্ত্রাগার থেকে বাগরাম মাত্র এক ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত, তাই যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থে এই ঘাঁটির গুরুত্ব অপরিসীম।
সিএনএন-এর সূত্র অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসন অন্তত এক মাস ধরে বাগরাম ঘাঁটি পুনরায় নেওয়া নিয়ে আলোচনা করছে। ঘাঁটি ফিরে পাওয়ার পেছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো চীনের ওপর নজরদারি চালানো, যা মাত্র ৫০০ কিলোমিটার দূরত্বে। এছাড়া আফগানিস্তানের বিরল খনিজ সম্পদ উত্তোলন, ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালনা এবং আফগানিস্তানে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি প্রয়োজন, যা ২০২০ সালে তালেবানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তির পরিপন্থী। ২০২১ সালে মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান থেকে সরে যাওয়ার পর থেকে বাগরাম ঘাঁটি তালেবান সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে।
ট্রাম্পের হুমকির জবাবে আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিফ অব স্টাফ ফাসিহউদ্দিন ফিতরাত স্পষ্টভাবে বলেছেন, “আফগানিস্তানের এক ইঞ্চি জমি দিয়েও কোনো চুক্তি সম্ভব নয়। আমাদের এর কোনো প্রয়োজন নেই।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে তালেবান সরকার বাগরাম ঘাঁটি হস্তান্তরের সম্ভাবনা সরাসরি নাকচ করেছে।
বাগরাম বিমানঘাঁটি ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান চালানোর সময় তৈরি করা হয়। দীর্ঘ দুই দশক এটি মার্কিন বাহিনীর প্রধান কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ২০২১ সালে তালেবানদের দ্রুত অগ্রগতির পর মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান ত্যাগ করে এবং ঘাঁটিটি তালেবান সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাগরাম ঘাঁটির কৌশলগত অবস্থান আফগানিস্তানের রাজনীতি, নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র চাইলে চীনের সঙ্গে কৌশলগত প্রতিযোগিতায় এটি ব্যবহার করতে পারে। তবে আফগানিস্তানের স্বতন্ত্র নীতির কারণে বাগরাম পুনঃদখল এখন দৃঢ়ভাবে অনিশ্চিত।
ট্রাম্পের হুমকি আফগানিস্তান ও আন্তর্জাতিক মহলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আফগানিস্তানে পুনরায় সামরিক উপস্থিতি ও বাগরাম দখলের চেষ্টা শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য হুমকি হতে পারে। পাশাপাশি এটি দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ও ভূরাজনীতির ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে।
এ মুহূর্তে বাগরাম দখলের চেষ্টা কেবল ট্রাম্পের বক্তব্যে সীমাবদ্ধ, কিন্তু কাবুলের স্পষ্ট প্রত্যাখ্যান প্রমাণ করছে যে, আফগানিস্তান স্বাধীনতার সঙ্গে আপোষ করবে না। ফলে ঘাঁটিটির ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত।
বাংলাবার্তা/এমএইচ