
ছবি: সংগৃহীত
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব আরও স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও কার্যকর করার উদ্দেশ্যে পুলিশের জন্য বিপুলসংখ্যক বডি ক্যামেরা আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, নির্বাচনের দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে ইউএনডিপির মাধ্যমে পুলিশের জন্য ৪০ হাজার বডি ক্যামেরা সংগ্রহ করা হবে। এর জন্য সরকারের খরচ হবে কয়েকশ কোটি টাকা।
অর্থ উপদেষ্টা জানান, বৈঠকে এটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। নির্বাচনের সময় মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যদের কার্যক্রম স্বচ্ছ রাখার জন্য এই প্রযুক্তি অত্যন্ত প্রয়োজন। তিনি বলেন, “পুলিশদের জন্য ৪০ হাজার বডি ক্যামেরা আনার প্রস্তাব আজ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দ্রুতই এগুলো সংগ্রহ করা হবে। নির্বাচনের সময় পুলিশ সদস্যদের এটি অবশ্যই লাগবে।”
ব্যয়ের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সঠিক পরিমাণ এখনই বলা সম্ভব নয়। তবে এটি নিশ্চিত যে, খরচ হবে কয়েকশ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় এ অর্থের ব্যবস্থা করবে। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নেই এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে এবং নির্বাচন খাতের ব্যয় থেকে অর্থ মেটানো হবে। অর্থ উপদেষ্টা আরও স্পষ্ট করে বলেন, “এটি আমরা পুলিশকে দিচ্ছি, নির্বাচন কমিশনকে নয়।”
প্রসঙ্গত, সাংবাদিকরা জানতে চান কেন সরাসরি সরকারি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় না গিয়ে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)-এর মাধ্যমে এই সরঞ্জাম আনা হচ্ছে। জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, মান এবং দামের নিশ্চয়তার বিষয়টি মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, “আমরা যখন টিকা এনেছি, সেটি ইউনিসেফের মাধ্যমে এনেছি। কারণ, আন্তর্জাতিক মান ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এই ধরনের সংস্থার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। টেন্ডার করলে মান নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে, দাম নিয়েও জটিলতা দেখা দিতে পারে। ইউএনডিপি মান ও দামের নিশ্চয়তা দেবে। এতে করে আমাদের কারও সঙ্গে সরাসরি দরকষাকষি করতে হবে না।”
এখন প্রশ্ন উঠছে—এই বিপুলসংখ্যক বডি ক্যামেরা মাঠপর্যায়ে ব্যবহৃত হলে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশ সদস্যরা প্রায়ই বিভিন্ন বিতর্ক ও অভিযোগের মুখে পড়েন। কখনও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ, কখনও বা অযাচিত বলপ্রয়োগের অভিযোগ ওঠে। বডি ক্যামেরা থাকলে প্রতিটি কার্যক্রম রেকর্ড হবে এবং পরবর্তীতে তা যাচাই করা সম্ভব হবে। এতে করে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে, পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালনে আরও সতর্ক থাকবেন এবং অভিযোগের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাবে।
নির্বাচন ঘিরে সারা দেশে পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হয়। এবার বডি ক্যামেরা সংযুক্ত হলে মাঠপর্যায়ে ভোটকেন্দ্র, রাস্তাঘাট বা মিছিল-মিটিং নিয়ন্ত্রণের সময় পুলিশি কর্মকাণ্ড আরও স্পষ্টভাবে নথিভুক্ত হবে। এতে করে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের রাজনৈতিক সংস্কৃতির মাঝেও প্রমাণভিত্তিক যাচাই-বাছাই সহজ হবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
তবে বডি ক্যামেরা ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা, সঠিক প্রশিক্ষণ এবং সার্বক্ষণিক ডেটা সংরক্ষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকেও নজরে রাখতে হবে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, শুধু ক্যামেরা কিনলেই হবে না; এর যথাযথ ব্যবহার, রক্ষণাবেক্ষণ ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকলে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যাবে না।
সব মিলিয়ে বলা যায়, সরকারের এই উদ্যোগ পুলিশ বাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের নতুন এক ধাপে নিয়ে যাবে। একই সঙ্গে আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে পুলিশের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়ানোর মাধ্যমে জনগণের আস্থা পুনর্গঠনে এটি একটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ