
ছবি: সংগৃহীত
সারা দেশে আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা ঘিরে কোনো ধরনের নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি নেই বলে স্পষ্ট আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) সকালে তিনি নারায়ণগঞ্জ শহরের ঐতিহ্যবাহী শ্রী রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম পূজামণ্ডপ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান।
তিনি বলেন, এ বছরের দুর্গাপূজা হবে সম্পূর্ণ উৎসবমুখর পরিবেশে এবং ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে। দেশের প্রতিটি পূজামণ্ডপে পূজারি ও দর্শনার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে পূজা পালন করতে পারেন, সে জন্য সরকার সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে। “সারা দেশে এবার প্রায় ৩৩ হাজার পূজামণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি মণ্ডপে নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার ও সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। পাশাপাশি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৮০ হাজার ভলান্টিয়ারও কাজ করবে,” বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তিনি জানান, পূজাকে ঘিরে নিরাপত্তা পরিকল্পনা অনেক আগেই হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও থানা পর্যায়ে প্রশাসনের সঙ্গে পূজা উদযাপন পরিষদ ও আয়োজক কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। মণ্ডপে প্রতিমা নির্মাণ শুরুর সময় থেকেই স্থানীয় প্রশাসনকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও জানান, প্রতিটি পূজামণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারি চালানো হবে। এর ফলে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ঘটার আগেই তা শনাক্ত ও প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো—পূজার সময় এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা, যেখানে পূজারি ও দর্শনার্থীরা নিশ্চিন্ত মনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। কোথাও কোনো আতঙ্ক বা নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হবে না।”
আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে দেশের প্রতিটি পূজামণ্ডপে আনসার, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও আয়োজকদের নিজস্ব ভলান্টিয়ার একযোগে দায়িত্ব পালন করবে। এর বাইরে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে আগত অতিরিক্ত ৮০ হাজার ভলান্টিয়ার যুক্ত হবে। ফলে প্রতিটি মণ্ডপে পর্যাপ্ত সংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী নিয়োজিত থাকবেন।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, পূজার মূল আয়োজনকে ঘিরে যাতে অযথা ভিড় ও জনসমাগম না হয়, সেদিকে কঠোর নজরদারি থাকবে। বিগত বছরের মতো এবারও পূজামণ্ডপের আশপাশে বড় আকারের মেলা বসতে দেওয়া হবে না। তবে কিছু দোকান বসার অনুমতি দেওয়া হবে, কিন্তু সেগুলোকে আয়োজক কমিটি ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মনে করেন, দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসব নয়, এটি এখন সার্বজনীন মিলনমেলার উৎসবে পরিণত হয়েছে। তাই সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ যাতে একসঙ্গে উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারেন, সেজন্য সরকার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। “ধর্মীয় সম্প্রীতি আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। পূজাকে ঘিরে এ সম্প্রীতি আরও সুদৃঢ় হবে বলে আশা করছি,” বলেন তিনি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা, জেলা পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আলমগীর হোসেন, র্যাব-১১ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন, বিজিবি ৬২ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সালাউদ্দিন চৌধুরী, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শংকর কুমার দে ও সাধারণ সম্পাদক শিখন চন্দ্র শিপন, শ্রী রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের অধ্যক্ষ স্বামী একনাথনন্দ, আমলাপাড়া সর্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি প্রবীর কুমার সাহাসহ বিভিন্ন পূজামণ্ডপ কমিটির নেতারা।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে যে, আসন্ন দুর্গাপূজা ঘিরে সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। তাই দেশের কোথাও কোনো ধরনের নিরাপত্তাঝুঁকি নেই এবং পূজার আনন্দ নির্বিঘ্নে উপভোগ করতে পারবেন পূজারি ও দর্শনার্থীরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ