
ছবি: সংগৃহীত
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশন উপলক্ষে সফরে থাকা অবস্থায় তিনি এ ঘোষণা দেন। এই ঘোষণাকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গন, কূটনৈতিক মহল ও সাধারণ জনগণের মধ্যে নতুন করে আলোচনার ঝড় উঠেছে।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় বিকেলে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস। এর আগে বাংলাদেশ থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধি দল দুটি ভাগে সেখানে যান। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন নেতৃত্বে থাকা অগ্রবর্তী দল দু’দিন আগেই নিউইয়র্কে অবস্থান নেয়। প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের ছয়জন উপদেষ্টার পাশাপাশি বিএনপি, জামায়াত এবং এনসিপির শীর্ষ নেতারাও রয়েছেন। এই উপস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জাতীয় ঐক্য জোরদার করার চেষ্টা করছে সরকার।
যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর পর সোমবারই বিশেষ দূত সার্জিও গোরের সঙ্গে বৈঠক করেন ইউনূস। বৈঠকে তিনি নির্বাচন প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেন, সরকার ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই ভোটের আয়োজনের পরিকল্পনা করছে এবং এ জন্য তারা সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরিতে সর্বাত্মক কাজ করছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে একটি ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দিতে এই ঘোষণা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে সাংবাদিকদের বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার তার বিভিন্ন পদক্ষেপ ও কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরতে চায়। তিনি জানান, আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেবেন। সেখানে তিনি সরকারের অগ্রাধিকারমূলক এজেন্ডা, গণতন্ত্রের পুনর্গঠন, মানবাধিকার, টেকসই উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে বক্তব্য রাখবেন।
প্রধান উপদেষ্টা ২৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে প্রবাসী বাংলাদেশিদের এক সমাবেশে ভাষণ দেবেন। ওই সমাবেশে তিনি অভিবাসীদের ভূমিকা ও দেশের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা নিয়ে কথা বলবেন। এছাড়া সাধারণ পরিষদের সাইড লাইনে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেজ, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নতুন সরকার আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানোর প্রয়াস চালাচ্ছে। সফরের অংশ হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও বৈঠক করবেন বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
এ বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম বার্ষিক অধিবেশন। এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে— “বেটার টুগেদার: এইটি ইয়ারস অ্যান্ড মোর ফর পিস, ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস”। এতে অংশ নিতে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা নিউইয়র্কে জড়ো হয়েছেন। বাংলাদেশও এই বৈশ্বিক আলোচনার কেন্দ্রে নিজের অবস্থান শক্তভাবে তুলে ধরতে চায়।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে। তিনি একদিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করছেন যে, বাংলাদেশে অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে; অন্যদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকেও নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। এর ফলে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি নতুন আস্থার পরিবেশ তৈরি হতে পারে।
আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দলসমূহ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হবে। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট হলে বাংলাদেশ একটি নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ে প্রবেশ করবে। আর সেই প্রস্তুতির সার্বিক বার্তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
বাংলাবার্তা/এমএইচ