
ছবি: সংগৃহীত
চলতি মাসের প্রথম ২১ দিনে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্স। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরের ১ থেকে ২১ তারিখের মধ্যে দেশে এসেছে ২০৩ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৪ হাজার ৭১৮ কোটি ৪৪ লাখ ৭৯ হাজার ৮০০ টাকা। (প্রতি ডলারের বিনিময় হার ১২১.৭১ টাকা ধরা হয়েছে)।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান সাংবাদিকদের জানান, গত বছরের একই সময়ে দেশে প্রাপ্ত রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১৬৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। অর্থাৎ চলতি বছরের প্রথম ২১ দিনে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২৪.৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি আরও জানান, ২১ সেপ্টেম্বর একদিনেই প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ১২ কোটি ৮০ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে এসেছে ৬৯৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০.১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত মাসগুলির প্রেক্ষাপটে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রবাহও উল্লেখযোগ্য। জুলাইয়ে দেশে এসেছে ২৪৭ কোটি ৭৯ লাখ ১০ হাজার ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩০ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। আগস্টে দেশে এসেছে ২৪২ কোটি ২০ লাখ ডলার, অর্থাৎ প্রায় ২৯ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। তবে উক্ত মাসে ৮টি ব্যাংক কোনো রেমিট্যান্স গ্রহণ করতে পারেনি। এসব ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে:
-
রাষ্ট্রায়ত্ত: বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল), রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)
-
বেসরকারি খাত: কমিউনিটি ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক
-
বিদেশি ব্যাংক: হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া
এই তথ্য থেকে বোঝা যায়, দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে ব্যাংকভিত্তিক বৈষম্য থাকা সত্ত্বেও প্রবাসীরা নিয়মিত এবং ব্যাপকভাবে অর্থ পাঠাচ্ছেন।
এর আগে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মার্চ মাসে দেশে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে, যা সেই বছরের রেকর্ড ছিল। পুরো অর্থবছরে প্রবাসী আয় দাঁড়ায় ৩০.৩৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৬.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রেমিট্যান্স প্রবাহের এই ধারাবাহিক বৃদ্ধি দেশের মুদ্রা সরবরাহ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের এই প্রবাহ দেশের বিনিয়োগ, ভোক্তা খরচ এবং সমৃদ্ধির হার বাড়াতে সাহায্য করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, প্রবাসীদের রেমিট্যান্স দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভকে শক্তিশালী করা, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা, এবং ব্যয়বহুল আমদানি সামলাতে এই অর্থ প্রধান ভূমিকা রাখছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রবাসীদের নিয়মিত এবং উচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ইতিবাচক সংকেত। চলতি বছরের শেষদিকে এবং পরবর্তী অর্থবছরে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রবাহ ধরে রাখতে সরকারের আরও নীতি গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ