
ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এক জরুরি সভার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফোরামের পক্ষ থেকে একই সঙ্গে আগামীকাল মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা আয়োজনেরও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
রাত ৮টায় জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক মো. আব্দুল আলীম ও সাধারণ সম্পাদক ড. মো. আমিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সকল প্রকার কার্যক্রম—যেমন ক্লাস ও পরীক্ষা—অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত থাকবে। পাশাপাশি, আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য প্রবর্তিত প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা বা পোষ্য কোটা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সূত্রেই এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ৪ শতাংশ পোষ্য কোটা ছিল। তবে চলতি বছরের ২ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে রাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব পোষ্য কোটাকে বাতিলের ঘোষণা দেন।
এরপর থেকেই শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পোষ্য কোটাকে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা দাবি করে একাধিক আন্দোলন শুরু করেন। সর্বশেষ গত ১৭ সেপ্টেম্বর এক চিঠিতে বলা হয়, ১৮ তারিখের মধ্যে দাবি আদায় না হলে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পূর্ণদিবস কর্মবিরতি ঘোষণা করা হবে।
১৮ সেপ্টেম্বর বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জরুরি একাডেমিক কমিটির সভা ডাকেন। সভায় ১০ শর্তে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আবারও আন্দোলনে নামেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার উত্তেজনা তৈরি হয় এবং ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা কার্যকর হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা সমিতি মনে করছে, শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও শিক্ষার পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত রাখার প্রয়োজন রয়েছে। আন্দোলন ও বিরোধিতার এই প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি শাটডাউনের পরিস্থিতির মুখোমুখি।
শিক্ষক ফোরামের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হবে এবং শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম পুনরায় শুরু হবে না। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও শিক্ষক-অফিস কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা এবং শিক্ষার পরিবেশ সংরক্ষিত থাকে।
এ পরিস্থিতিতে রাবির শিক্ষার্থীরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। একাংশ শিক্ষক ও প্রশাসনের সিদ্ধান্তের পক্ষে থাকলেও অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, আন্দোলনের মূল বিষয় সমাধান না হলে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও শিক্ষার স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পোষ্য কোটার পুনর্বহাল ও শিক্ষক-অফিস কর্মকর্তাদের দাবির মধ্যে ভারসাম্য না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক জটিলতা, পোষ্য কোটা নিয়ে চলমান দ্বন্দ্ব, শিক্ষক-অফিস কর্মকর্তাদের আন্দোলন ও শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়ার সংমিশ্রণে রাবি বর্তমানে সংকটজনক অবস্থার মধ্যে রয়েছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্ত শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষার্থীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষক ফোরামের মধ্যে সমন্বয় এবং সুষ্ঠু সমাধান ছাড়া শিক্ষার ক্ষতি এড়ানো কঠিন হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ