
ছবি: সংগৃহীত
মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় ১০ জন শহীদসহ আরও ১৭৫৭ জন জুলাই যোদ্ধার গেজেট প্রকাশ করেছে, যা দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সোমবার (২৮ জুলাই) মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হরিদাস ঠাকুর স্বাক্ষরিত এই গেজেট প্রকাশিত হয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দীর্ঘদিন ধরে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্বিতীয় ধাপে এই গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে।
এই ঘোষণার মধ্যে রয়েছে তিনটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত যোদ্ধাদের নাম, যারা ১০১ জন অতি গুরুতর আহত, ২১০ জন গুরুতর আহত এবং বাকিরা গুরুতর থেকে সামান্য কম আহত হিসেবে বিবেচিত। এর মধ্যে রয়েছে ১০ জন শহীদ, যাদের আত্মত্যাগ বাংলাদেশ স্বাধীনতার ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
গেজেটে ঢাকা বিভাগের ৪০৫ জন, খুলনার ১৬৬ জন, চট্টগ্রামের ২২৬ জন, বরিশালের ১১৬ জন, ময়মনসিংহের ১১১ জন, রংপুরের ৯০ জন, রাজশাহীর ২৩৬ জন এবং সিলেটের ৮৮ জন যোদ্ধার নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এর আগে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় প্রথম ধাপে ১২ হাজার ৮৭৭ জন শহীদ ও আহত যোদ্ধার নাম গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করেছিল, যা দেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটকে বিস্তৃত করেছে।
গেজেট প্রকাশের পাশাপাশি, সরকার বিধিমালা অনুযায়ী শহীদ পরিবারের প্রতি দিক থেকে বিভিন্ন আর্থিক সুবিধা প্রদান করছে। প্রত্যেক শহীদ পরিবারের জন্য এককালীন ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেওয়া হচ্ছে। চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে মোট ৭৭২টি শহীদ পরিবারের মধ্যে প্রতি পরিবারকে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র প্রদান করা হয়েছে, যার মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। বাকি ৭২টি পরিবারের ক্ষেত্রে পারিবারিক ও ওয়ারিশগত জটিলতা নিরসনের পর সঞ্চয়পত্র বিতরণ অব্যাহত থাকবে। শহীদ পরিবারের জন্য বাকি ২০ লাখ টাকার অনুদান ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে প্রদান শুরু হবে।
শহীদ পরিবারের সদস্যরা মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতাও পাবেন, যা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এছাড়া, বিধিমালা অনুযায়ী শহীদ ও আহত যোদ্ধাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে উপার্জনমুখী প্রশিক্ষণ দিয়ে পুনর্বাসন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
সরকারিভাবে এই ভাতা প্রদান প্রক্রিয়াটি অনলাইনে পরিচালিত হচ্ছে এবং সমৃদ্ধ তথ্যভান্ডারের জন্য একটি ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) তৈরির কাজও চলছে, যা মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য সংগ্রহ ও সেবা প্রদানে সহায়ক হবে।
মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষায় এই পদক্ষেপগুলো বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ও আদর্শকে বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা আত্মত্যাগ করেছেন তাদের প্রতি এই সরকারী উদ্যোগ দেশবাসীর কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই উদ্যোগ মুক্তিযোদ্ধাদের ও তাদের পরিবারকে সামাজিক নিরাপত্তা ও মর্যাদার নিশ্চয়তা দেয়ার পাশাপাশি দেশের ইতিহাস ও জাতীয়তা সংরক্ষণে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। একই সঙ্গে এটি নতুন প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য ও গৌরব প্রতিফলিত করার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখবে।
পরবর্তী সময়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় আরও সমন্বিত ও ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের কল্যাণে কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা দেশের গণতান্ত্রিক ও সামাজিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় ঐক্যের প্রসারে সহায়ক হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ